সাতসতেরো

মানুষের চামড়া সংগ্রহ করাই ছিলো যার নেশা

এক জীবনে মানুষের কত রকম শখইতো থাকে! সেই শখের বসে অদ্ভূত অদ্ভূত সব জিনিস সংগ্রহ করে কেউ কেউ। কেউ সংগ্রহ করেন হারিয়ে যাওয়া পুরনো তৈজসপত্র, কেউ সংগ্রহ করেন পুরনো মুদ্রা। তবে অদ্ভুতুরে এক ব্যক্তির দেখা মিলেছিলো জাপানে, যার শখ ছিলো মানুষের চামড়া সংগ্রহের।

নানা আবিষ্কারের জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত জাপান। জাপানের রাজধানী টোকিওতে অবস্থিত জিকেই ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন। এই ইউনিভার্সিটিতে গবেষকরা নানান বিষয় নিয়ে গবেষণা করে থাকেন। টোকিওর এই ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে অদ্ভুত এক জাদুঘরের। সেই জাদুঘরে সারি সারি ভাবে সাজানো রয়েছে মানুষের চামড়া। কোন চামড়ায় আঁকা ট্যাটু আবার কোন চামড়ায় বাহারি উল্কি। এসব চামড়া কোথা থেকে এলো এই জাদুঘরে? এপ্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে যে মানুষটির নাম পাওয়া যায় তিনি টোকিওর ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফুকুশি মাসাইচি।

ফুকুশি মাসাইচি ১৮৭৮ সালের ৩০ জানুয়ারি জাপানের ইয়ামগাছিতে জন্মগ্রহণ করেন। টোকিও ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি থেকে মেডিসিনে পড়ালেখা শেষ করে উচ্চ ডিগ্রী নিতে জার্মানিতে পাড়ি জমান এরপর দেশে ফিরে তিনি জাপানি প্যাথলজিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

ডাক্তারির পাশপাশি তাকে বেশ আকৃষ্ট করতো রোগীর শরীরে আকা উল্কি বা ট্যাটু। এসবের সৌন্ধর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি চাইলেন সেসব সংগ্রহ করতে। এরপর সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করলেন তিনি। নানা জায়গা থেকে উল্কি বা ট্যাটু আঁকা চামড়া সংগ্রহ করতে লাগলেন। হাসপাতালে কোন মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য এলেও সেই মৃতহেদের উল্কি করা অংশ কেটে সংগ্রহ করতেন তিনি। এছাড়াও অনেকেই তাদের চামড়া সংরক্ষণ হবে বলে মরণোত্তর চামড়া দান করে যেতেন। গবেষণার জন্য অনেকের কাছে টাকা দিয়েও চামড়া বুকিং করতেন মাসাইচি যেন মৃত্যুর পর তারা চামড়া দিয়ে যায়।

এক দশকের বেশি সময়ে প্রায় দুই হাজার মানুষের চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। যদিও বেশিরভাগ চামড়াই হারিয়ে ফেলেন মাসাইচি। ১৯৪৫ সালে বিমান হামলায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন মাসাইচি, সে সময়য় বেশিরভাগ চামড়া হারিয়ে ফেলেন । লাগেজ ভর্তি চামড়া নিয়ে শিকাগোতে যাওয়ার সময়ও লাগেজ হারিয়ে ফেলেন তিনি এতেও অনেক চামড়া হারিয়ে যায় তার সংগ্রহ থেকে। এখন পর্যন্ত ১০৫টি মানুষের ভিন্ন ভিন্ন চামড়া সংগ্রহ আছে টোকিওর সেই ইউনিভার্সিটিতে।

এসব চামড়া সংগ্রহের জন্য চারপাশে বেশ সুনাম ছিলো মাসাইচির। যে কোন ধরনের ট্যাটু প্রতিযোগিতায় তিনি সবার আগে দাওয়াত পেতেন। তার সংগ্রহ করা চামড়াগুলো এখনো সংগ্রহে আছে সেই জাদুঘরে তবে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়।