সারা বাংলা

শরীয়তপুরে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় ২ চিকিৎসক লাঞ্ছিত

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে সন্তানের চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় দুই চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এলিম পাহাড়ের বিরুদ্ধে। শনিবার (৪ মে) দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঘণ্টাব্যাপী হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ রাখেন চিকিৎসকরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মারামারির ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এলিম পাহাড়ের ছেলে অভি পাহাড় (১৫)। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে হাসপাতালে ছুটে আসেন এলিম পাহাড় ও তার লোকজন। এ সময় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বপালন করছিলেন ডা. লিমিয়া সাদিয়া। আর তার পাশে ময়না তদন্তের রিপোর্ট তৈরি করছিলেন ডা. শেহরিয়ার ইয়াছিন। এ সময় এলিম পাহাড় তার ছেলেকে দ্রুত চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ তুলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিমিয়া সাদিয়াকে গালমন্দ শুরু করলে ডা. শাহরিয়ার ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। আর তখনি ডা. শাহরিয়ার ইয়াছিনের জামার কলার ধরে সকলের সামনে তাকে থাপ্পড় দেয়া হয় এবং চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তছনছ করে ফেলা হয়। 

এ সময় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান ছুটে আসলে তাকেও ধাক্কা দেয়ার পাশাপাশি টানাহ্যাচরা করা হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই পালিয়ে যায় এলিম পাহাড় ও তার লোকজন।

অভিযুক্ত শ্রমিক নেতা এলিম পাহাড় মুঠোফোনে বলেন, ‘হাসপাতালে আমার ছেলেকে নিয়ে আসার পর ২ ঘণ্টার মধ্যে কেউ চিকিৎসা দিতে আসেনি। আমার ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। চিকিৎসককে বললে উনি শুধু বলেন তার সময় হলে দেখবেন।’ 

ডা. শেহরিয়ার ইয়াছিন অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমি জরুরি বিভাগে বসে প্রশাসনিক কাজ করছিলাম। তখন চিকিৎসক লিমিয়া অন্য রোগী দেখছিলেন। এলিম পাহাড় এসে ডা. লিমিয়ার উপরে চড়াও হন। আমি তাকে একটু অপেক্ষা করতে বলি। তখন ‘তুই কেন আসলি না’ বলে আমাকে থাপ্পড় মারেন।’’

জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক লিমিয়া সাদিয়া বলেন, ‘আমি রোগীকে দেখে হ্যান্ড গ্লোবস পরে আসতে যতটুকু সময় লাগে, ওই টুকুই দেরি হয়েছিল। এতে ওই শ্রমিক নেতা ডা. শেহরিয়ার ইয়াছিনের উপরে ক্ষিপ্ত হন। আমি তাকে থামাতে গেলে  তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গায়ে হাত তোলেন।’

জানতে চাইলে শরীয়তপুর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি, তার ছেলেকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে এক থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে রাগারাগি করেছেন। তবে গায়ে হাত দেয়ার বিষয়টি জানা নেই। তিনি যদি চিকিৎসকের গায়ে হাত দিয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে।’

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি চিৎকার শুনে জরুরি বিভাগে গেলে আমারকেও তিনি গালিগালাজ করেন। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি, তার রোগী পুরোপুরি সুস্থ। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার বিষয় অবগত আছি। একটি অভিযোগ পেয়েছি। আসামিকে দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’