সারা বাংলা

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ

প্রচণ্ড গরমের কারণে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল এবং জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন মানুষ। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। 

শনিবার (৪ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, ২৫০ শয্যার কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় চাদর-পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছেন শতাধিক রোগী। প্রচণ্ড গরমে রোগী ও স্বজনদের হাঁসফাঁস অবস্থা। রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে চিকিৎসক ও নার্সদের। এদিন, এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৫০ জন। মোট শয্যার তুলনায় ৫০০ বেশি রোগী চিকিৎসাধীন সেখানে। 

গত চারদিন ধরে দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তান সাবিমকে নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রয়েছেন শহরের লারপাড়ার জান্নাতুল বকেয়া। তিনি জানান, চারদিন আগে ডায়রিয়া জনিত কারণে সন্তানকে হাসপতালে ভর্তি করান। অতিরিক্ত গরমে ছেলের এমন অবস্থা বলে জানান তিনি। 

শ্বাসকষ্ট ও পাতলা পায়খানা নিয়ে গত শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সমিতিপাড়া এলাকার জাশেদ উদ্দিন (৩৭)। তার স্ত্রী মুর্শিদা আক্তার বলেন, প্রচণ্ড গরমে জাশেদের শরীর আগে থেকে খারাপ ছিল। শ্বাসকষ্টও ছিল। এ অবস্থায় গরমে রিকশা চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান তিনি। অন্যদের সহায়তায় মাথায় পানি ঢেলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসার পর তিনি এখন অনেকটা ভালো আছেন। আগের চেয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হওয়া প্রচণ্ড গরমে হাসপাতালে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন শ্বাসকষ্ট, পাতলা পয়খানা, নিউমোনিয়া রোগ নিয়ে রোগী বেশি আসছে। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। সবমিলিয়ে শনিবার ৭৫০ জন রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। 

অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, গরমে বাড়ির বাইরে না যাওয়াই উত্তম। যদি একান্তই বাইরে যেতে হয় তাহলে ছায়ার মধ্যে যেন থাকা হয়। যথেষ্ট পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অসুস্থ বোধ করলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

এদিকে, কক্সবাজার জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে দিন দিন রোগীর চাপ বাড়ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর ইনডোর-আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। 

টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় রুদ্র বলেন, ৫০ শয্যার হাসপাতাল সরকারি জনবল নিয়ে ৫৮ শয্যায় চালানো হচ্ছে। বিশেষ চাহিদায় আরো ৪৮ শয্যা দেওয়া হয়েছে। দৈনিক ৬০ থেকে ৭৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গরমজনিত রোগ নিয়ে বেশি রোগী আসছেন।

উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুচ সালাম জানান, তাদের কমপ্লেক্সে আউটডোর রোগী দেখা হয়। দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেশি বলেও জানান তিনি। 

রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. উত্তম বড়ুয়া বলেন, ৩১ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে নিয়মিত ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি থাকে। প্রতিদিন ৫০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুরা বেশি ভর্তি হচ্ছে। 

চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. নুরুল আজম সোহান জানান, তাদের ৫০ শয্যার হাসপাতালে নিয়মিত ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এই সময়ে গরমজনিত রোগী বেশি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স মৌসুমী খাতুন বলেন, শনিবার ৫৯ জন রোগী ভর্তি হয়। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগ নিয়ে শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে ২২ জন। অন্যান্য রোগ নিয়ে পুরুষ ১৮ ও নারী ১৯ জন ভর্তি রয়েছেন। এই হাসপাতালে সরকারি নার্সের সংখ্যা ২০ জন, বেসরকারি নার্স ১১ জন। গরমে রোগীর চাপ বেশি। তারা নিয়মিত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।