সারা বাংলা

কালবৈশাখীর তাণ্ডব, ফেনীর অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই

কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফেনীতে। গাছপালা উপড়ে ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। ঝড়ের সঙ্গে কিছু কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ওই সব এলাকায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সোমবার (৬ মে) দুপুর ১২টা থেকেই ফেনীর আকাশে ছিল মেঘের ঘনঘটা। পরে শুরু হয় কালবৈশাখীর তাণ্ডব। ঝড়ের সময় সড়কের ওপর গাছপালা পড়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

জানা গেছে, কালবৈশাখী ঝড়ে জেলার ফেনী-সোনাগাজী সড়ক, ছাগলনাইয়া- শুভপুর সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোল, বিসিক এবং ফেনী শহরের বিভিন্ন সড়কে গাছপালা পড়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরমধ্যে মহাসড়কের বিসিক ও লালপোলে এলাকার সড়ক গাছ পড়ায় দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়। ফলে মহাসড়কের একমুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে গাছ অপসারণ করা হলে ধীর গতিতে গাড়ি চলতে শুরু করে। 

আব্দুর রহিম নামের এক পথচারী বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি ছিল না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদ বাড়তে থাকে। দুপুর থেকে আকাশে মেঘ জমতে থাকে। আচমকা অন্ধকার নেমে আসে। হঠাৎ বাতাস আর বজ্রপাত শুরু হয়। সঙ্গে বৃষ্টিও বেড়ে যায়।

ছাগলনাইয়া উপজেলার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ঝড় শুরু হওয়ার পর থেকেই বিদ্যুৎ নেই। রাস্তায় গাছপালা পড়ে আছে। যানচলাচল বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন সড়কে। সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

পরশুরাম উপজেলার বীরচন্দ্র নগর গ্রামের কৃষক আজহারুল হক বলেন, মাঠের বোরো ধান ঘরে তোলার ঠিক আগমুহূর্তে এমন বৃষ্টি চিন্তায় ফেলেছে। ভালো ফলন হলেও ফসল বাড়ি আনতে পারবো কিনা জানি না। বৃষ্টিতে এখনই জমিতে পানি জমে গেছে। বাতাস হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একরাম উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে ফেনীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বোরো ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। মাঠে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি ধান পেকে গেছে। বৈরী আবহাওয়ার হাত থেকে ফসল রক্ষায় জমির ধান ৮৫ শতাংশ পাকার সঙ্গে সঙ্গেই কেটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাতাস ও বৃষ্টি স্থায়ী না হলে আশা করি কৃষকের খুব বেশি ক্ষতি হবে না।

ফেনী ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবুল বাসার বলেন, জেলার বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে যানচলাচল বন্ধ থাকার সংবাদে ফায়ার সার্ভিসের সব টিম একযোগে মাঠে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন উপজেলা ইউনিটও গাছ অপসারণে কাজ করে। মহাসড়কের লালপোল ও বিসিক এলাকায় গাছ পড়ে যানচলাচল বন্ধ ছিল। দ্রুত সেখানকার গাছ অপসারণে কাজ করে যানচলাচল স্বাভাবিক করা হয়। 

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর সহকারী প্রকৌশলী-১ মোহাম্মদ হারুণ বলেন, দুপুর থেকে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ২০টি লাইন গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার কারণে শহরের মহিপাল, ট্রাংক রোড ও হাসপাতাল মোড়সহ পৌর এলাকার অনেক স্থানে বিদ্যুৎ ছিল না। রাত ৮টা পর্যন্ত দুইটি লাইন স্বাভাবিক করা হয়েছে। দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে মাঠ পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন কাজ করছেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হবে। 

ফেনী পল্লী বিদ্যুতের জিএম ফজলুর রহমান বলেন, বিদুৎতের তার গাছ পড়ায় জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সব জায়গায় গাছপালা অপসারিত হওয়ার পরেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।