খেলাধুলা

আলো কেড়ে বড় কিছুর অপেক্ষায় অঙ্কন-রনি

আবু হায়দার রনির যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল আট বছর আগে মুকিদুল ইসলাম তার ধাঁরের কাছেও যাননি। বিপিএলে ভালো করে বাঁহাতি পেসারের মাথায় উঠেছিল জাতীয় দলের ক্যাপ। ১৩ টি-টোয়েন্টি ও ২ ওয়ানডেতেই থেমে যায় পথচলা।

অন্যদিকে ডানহাতি ব্যাটসম্যান অঙ্কনের এখন পর্যন্ত দৌড় ‘এ’ দল। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে নাম কুড়িয়েছেন। কিন্তু বড় পর্যায়ে এখনও খেলার সুযোগ হয়নি। তবে এই দুই ক্রিকেটার সদ্য শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যেভাবে পারফর্ম করছেন, যেভাবে আলো ছড়িয়েছেন তাতে বড় পর্যায়ে খেলার থেকে খুব বেশি দূরে নন তারা। 

দুজনের ঠিকানা ছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। রনি উইকেট শিকারিদের তালিকায় শীর্ষে। ঠিক অঙ্কনও রানের দিক থেকে ছাড়িয়ে গেছে সবাইকে। তাদের পারফরম্যান্সে উজ্জ্বলও ছিল মোহামেডান। ১৩ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে রানার্সআপ হয়েছে তারা। লম্বা সময় পর ক্রিকেটে এটাই তাদের সেরা সাফল্য। যে সাফল্যর রূপকার রনি ও অঙ্কন। 

১৬ ইনিংসে ৬৪৭ রান করেছেন অঙ্কন। গড় রান ৪৬.২১। ১ সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৭ ফিফটি। সমান ম্যাচে রনি পেয়েছেন ৩১ উইকেট। গড় ১৯.০৬। ইকোনমি ৪.৯১। বোলিংয়ের সঙ্গে এবার ব্যাটিংটাও ভালো করেছেন রনি। ১২ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ২৫০ রান করেছেন। ৪টিতেই ছিলেন নট আউট। তার স্ট্রাইক রেট ছিল নড়রকাড়া ১২১.৯৫। শেষ দিকে নেমে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কাজটা সিদ্ধহস্তে সামলেছেন এ ক্রিকেটার।

দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক প্রতিযোগিতা ঢাকা লিগ। এখানে ভালো করা মানেই নির্বাচকদের নজরে আসা। নিজেদের কাজটা অঙ্কন ও রনি দুজনই করেছেন। তাদের এগিয়ে নেওয়ার বাকি কাজটা নির্বাচকদের ওপরই ছেড়ে দিলেন তারা।

পুনরায় জাতীয় দলে ফিরতে মুখিয়ে থাকা রনি বলেছেন, ‘অনেক দিন ধরেই জাতীয় দলের বাইরে। তখন অনেক ত্রুটি ছিল। এখন বেশ ভালো অবস্থায় আছি। এখন আগের চেয়ে অনেক অভিজ্ঞ হয়েছি। ম্যাচ ভাবনা পাল্টেছে। স্কিলে উন্নতি হয়েছে। পারফর্ম করা আমার কাজ। সেই কাজটা করে যাচ্ছি। বাকিটা নির্বাচকদের ওপর।’

অনেক দিন ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছেন অঙ্কন। তার সামর্থ্য সম্পর্কে জানেন নির্বাচকরা। তার বিশ্বাস তাকে শিগগিরিই বিবেচনায় আনা হবে, ‘আমি অনেক দিন ধরেই পারফর্ম করছি। আশা করছি নির্বাচকরা আমাকে বিবেচনায় আনবেন।’

জাতীয় দলের বর্তমান স্কোয়াডে যুক্ত হতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে দুজনই জানেন। কারণ এক পজিশনেই এখন অনেক প্রতিযোগী। এই প্রতিযোগিতা উপভোগ করছেন তারাও। রনি বলেছেন, ‘এই প্রতিযোগিতা থাকাটা খুবই ভালো। যারা বাইরে আছি, ওদের জন্য চাপ তৈরি হয় ভালো করার। আবার জাতীয় দলে যারা আছে, তারা ভালো করলে আমরা আরও বেশি উজ্জীবিত হই ভালো পারফরম্যান্স দিতে। এমন প্রতিযোগিতা দেশের ক্রিকেটের জন্যই ভালো।’

অঙ্কনের ভাষ্য, ‘এটা অবশ্যই ভালো। আমরা রান করছি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করছি। আবার তারা ওখানে ভালো করে আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। এটা ভালো দিক।’

নিজের উন্নতি নিয়ে রনি যোগ করেছেন, ‘আমার রানআপ কিছুটা স্লো ছিল। এখন রানআপ ফাস্ট করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া হ্যান্ড সুইংয়ে উন্নতি হয়েছে। এটা পারফেক্ট হওয়ার কারণে অফ দ্য পিচ বলটা একটু গতিতে আসছে। একটু জোরে যাওয়াতে ব্যাটসম্যানদের একটু সমস্যা হচ্ছে।’

অঙ্কনের বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ’ স্ট্রাইক রোটেট। বড় শট অনায়েসে খেলতে পারলেও বৃত্তের ভেতরে জায়গা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় তার। তাতে চাপ বাড়ে তার ব্যাটিংয়ে। তবে এই চাপকে বড় ইস্যু বানাতে চান না অঙ্কন, ‘আমি সময় নিয়ে ব্যাটিং করি। এটা আমি উপভোগ করি। এটা ওয়ানডেতে কিন্তু। টি-টোয়েন্টি আর লাল বলে কিন্তু খেলার ধরণ আলাদা। আমার হাতে সময় থাকে বলেই আমি সময় নিতে পারি। যখন খেলার ধরণ পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় সেটাও আমি পারি। এটা বড় কোনো বিষয় নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী সবকিছুই পরিবর্তন করা যায়।’

ঢাকা লিগে আলো কেড়ে অঙ্কন ও রনি বড় কিছুর অপেক্ষায় আছেন। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এরপরই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যস্ত সময় কাটানোর পর তাদের অপেক্ষাও আরেকটু লম্বা হচ্ছে। নির্বাচকরা তাদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করবেন তো?