বিদ্যুতের অযৌক্তিক মিটার রেন্ট ও ডিমান্ত চার্জ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে শনিবার (১১ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের শহীদ সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ বাবুল হাওলাদার।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ বাবুল হাওলাদার বলেন, ২০১৪ সালে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। যার অধীনে খুলনায় ২০১৫ সালে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্রিপেইড মিটার স্থাপনকালে ওজোপাডিকোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিনামূল্যে এ মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। এ বাবদ মূল্য নেওয়া হবে না। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই সংস্থার আবাসিক মিটারে মাসে ৪০ টাকা এবং বাণিজ্যিক মিটারে ২৫০ টাকা হারে ভাড়া গ্রহণ করা শুরু করে। যা গ্রাহকদের সঙ্গে রীতিমত মিথ্যাচার ও প্রতারণা। পরবর্তীতে খুলনা নাগরিক সমাজসহ অন্যান্য সংগঠনের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংবাদ সম্মেলন করে মিটারের মূল্য সমন্বয় হওয়ার পর আর মিটার ভাড়া নেওয়া হবে না- মর্মে ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, মিটার স্থাপনের সময় আবাসিক মিটারের ক্রয়মূল্য ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা এবং বাণিজ্যিক মিটারের মূল্য ছিল ১৪ হাজার টাকার মতো। অথচ গত ৮ বছর মিটার ভাড়া নেয়া হচ্ছে, যা ক্রয়মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি ইতোপূর্বে খুলনায় ৬১ হাজার আবাসিক এবং ২ হাজার বাণিজ্যিক মিটার স্থাপন করেছে। এই বিশাল সংখ্যার মিটার থেকে লাগাতারভাবে অতিরিক্ত মিটার ভাড়া গ্রহণ করা হচ্ছে, যা শুধু বাড়ির মালিকদেরই নয় সিংহভাগ ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদের ঘাড়ে এসে পড়ছে। ফলশ্রুতিতে স্বল্প আয়ের মানুষকেই এর দায়ভার নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সময় সংস্থাটি পূর্বের এনালগ মিটার খুলে নিলেও তার জামানত/মূল্য সমন্বয় করা হয়নি। এ ব্যাপারে সংস্থাটি নির্বিকার।
মোহাম্মদ বাবুল হাওলাদার আরও বলেন, সরকার একদিকে গ্রাহকের ব্যবহৃত বিদ্যুতের উপর ভ্যাট গ্রহণ করছে, যা সংবিধিবদ্ধ। অন্যদিকে বিদ্যুতের চার্জ বাবদ মোট চার্জ হিসেবে অর্থ নেওয়ার পরও ডিমান্ড চার্জের নামে বিশাল অংকের টাকা গ্রহণ করছে সংস্থাটি। যে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্তে একটি চিত্র তুলে ধরা হয়, তা হলো— মোট চার্জ ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ, ডিম্যান্ড চার্জ ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ভ্যাট ৪ দশমিক ৭৬; অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকায় গ্রাহকের খরচ হচ্ছে ৪৬ দশমিক ৬৭ টাকা। এর উপর বাড়তি মিটার ভাড়া। একদিকে সরকারের ভ্যাট, অন্যদিকে মোট চার্জ, মিটার ভাড়া, আবার ডিমান্ড চার্জ।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রতি মিটার ভাড়া এবং ডিমান্ড চার্জ প্রত্যাহার, প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সময় খুলে নেওয়া এনালগ মিটারের জামানত/মূল্য ফেরৎ/সমন্বয় করা আহ্বান জানানো হয়। চলতি মাসের মধ্যে গ্রাহকদের সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা নাহলে লাগাতার আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ ফ ম মহসীন সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সদস্য এস এম দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির খুলনা মহানগর সভাপতি শেখ মফিদুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই পাল, খুলনা উন্নয়ন আন্দোলনের চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীর সাধারণ সম্পাদক সরদার আবু তাহের, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নেতা অধ্যাপক সঞ্জয় সাহা, খ ম শাহীন হোসেন, নাজমুল তারেক তুষার, সোয়াইব হোসেন বাবু, নারীনেত্রী নাফিছা ইসলাম সোমা প্রমুখ।