রাইজিংবিডি স্পেশাল

রেমালে বিপন্ন মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ

ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ এবং মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দলটির নেতারা। তারা বলেছেন, দেশের যেকোনো দুর্যোগে সর্বাগ্রে ছুটে যাওয়া দল আওয়ামী লীগ, বিষয়টিকে দেশ ও মানুষের সেবার অংশ মনে করে।

গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার পর ছয় জেলার ক্ষতির তালিকা অনুযায়ী, ৫ লাখ ২৮ হাজার পরিবারের প্রায় ২২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ঝড়ে বরিশাল বিভাগে ১৩ জন মারা গেছেন। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৫৩১টি ঘর। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭২ হাজার ১৬৩টি ঘর।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের ২০ জেলায় ৬ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ২৬ মে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানে। এর প্রভাবে উপকূলীয় বেশকিছু এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। যার ফলে এসব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়। এছাড়া ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। বেশকিছু রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ১৯ জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ত্রাণকার্যে নগদ ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৯ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন, গো- খাদ্যের জন্য ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্য কেনার জন্য ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও প্রচার-প্রচারণা চালানো, মাইকিং করা, গবাদি পশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া, প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন বিতরণসহ ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার কাজে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতারাও নেমে পড়েন কাজে। ঝড় আসার আগে দলের নেতাকর্মীরা ঝাপিয়ে পড়েন এসব কাজে।

রেমাল আঘাত হানার সরকারের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ঝড়ের পরই সবার আগে ছুটে যান পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়, যেখানে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষ। সেখানে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাঁধ দ্রুত পুনর্গঠনে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় দলীয় নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।

এবারের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস খুবই অস্বাভাবিক হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সাইক্লোন সেন্টার করেছি, সেখানে মানুষ আশ্রয় পেয়েছে। যারা গৃহহীন, তাদেরকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দিয়েছি। যে কারণে মানুষ অন্তত আশ্রয়ের জায়গা পেয়েছে। পশুপাখি আশ্রয়ের ব্যবস্থা পেয়েছে।’

‘আমরা চাই দুর্যোগ থেকে এই এলাকার মানুষ যেন মুক্তি পায়। আমরা জানি, এই এলাকা সবসময়ই দুর্যোগপ্রবণ। ইতিমধ্যে যে সমস্ত রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যে বাঁধগুলো ভেঙে গেছে, সেগুলোও মেরামতের কাজ ইতিমধ্যে আমরা শুরু করে দিয়েছি। যাতে বর্ষার আগেই আমরা বাঁধগুলো নির্মাণ করে জলোচ্ছ্বাস বা পানির হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারি’, বলেন তিনি।

এদিকে, রোববার (২ জুন) নিজের এলাকায় গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন দিনাজপুর-২ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। দিনব্যাপী একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে গ্রামবাসীর কাছে তাদের কথা শুনেছেন। দিয়েছেন সমাধানের আশ্বাস। তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের ডেকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় শ্রী কৃষ্ণপুর আশ্রম এলাকা, যেখানে প্রায় একশ’ বাড়ি আছে, সেখানে ঝড়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মন্ত্রী তাদের বাড়িঘর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার এসব পদক্ষেপে হাসি ফুটছে ওসব এলাকার মানুষের মাঝে।

এদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপির নেতৃত্বে  দলের একটি প্রতিনিধিদল দক্ষিণাঞ্চল সফর করেছেন। তারা পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাচ্ছেন। তারা পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও মানুষজনের খোঁজখবর সবসময় রাখছেন। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে পটুয়াখালী, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেকগুলো জেলা শহরেও পানি উঠেছিলো। অবশ্য তা পরদিন নেমে গেছে। তবে উপকূলবর্তী অনেক এলাকায় এখনো পানি আছে। অনেকের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় জনজীবন এখনো বিপর্যস্ত।

‘আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছি, সর্বতোভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছি। আওয়ামী লীগ জনমানুষের দল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে।’

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজ নেওয়া ও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে ছাত্রলীগ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ত্রাণের প্যাকেটে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আলু এবং খাবার স্যালাইন সরবরাহ করেন।

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় মানুষের পাশে ছিলো এবং আছে। অসহায় পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ১ হাজারের বেশি মানুষের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।’

দেশের যেসব উপকূলীয় অঞ্চলসমূহে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হেনেছে, সেসব স্থানে একযোগে ছাত্রলীগের এই ত্রাণ বিতরণ এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের লক্ষ্যে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপকমিটি। ১১ সদস্যের একটি টিম সাতক্ষীরা শ্যামনগর, খুলনা ও বাগেরহাটে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। সাধারণ মানুষের যেকোনো দুর্দিনে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মী সব সময় জনগণের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক যে ঘূর্ণিঝড়টি হয়েছে তাতে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওসব অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গতদের ঘরে ঘরে খাবার সামগ্রী পৌঁছে দেবেন।

এদিকে, রোববার খুলনার পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত দেলুটি ইউনিয়ন, ফুলবাড়ী বাজার, গড়ইখালী ইউনিয়নের শান্তাবাজার, কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে দশহালিয়াতে ত্রাণ বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। যেকোনো দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূর্গত মানুষের পাশে থেকেছেন, আগামীতেও থাকবেন। উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কারে যা যা করা দরকার সবই তিনি করছেন। ইতোমধ্যে গাবুরাতে টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পাইকগাছা-কয়রায় টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। বন্যাকবলিত এই নদী ভাঙন প্রবণ এলাকায় অতি দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।