অন্য দুনিয়া

বন্যার কারণ রেইন বোমা ও উড়ন্ত নদী

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন কারণে দেশে-দেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিচ্ছে। গত বছরের এপ্রিলে ইরাক, ইরান, কুয়েত এবং জর্ডানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। এর কারণ ওইসব অঞ্চলের আকাশ বা বায়ুমণ্ডল রেকর্ড পরিমাণ আর্দ্রতা বহন করেছে।  গতবছর ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল চিলিতে। এতো পানি ঝরেছিল যে আন্দিজ পর্বত অংশের তুষার গলে গিয়েছিল। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল স্থানীয় রাস্তা, সেতু। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মিঠা পানি সরবরাহ। ওই বৃষ্টিপাতকে রাজনীতিবিদরা বলছেন, ‘রেইন বোমা’।  কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় বন্যা দেখা দিযেছিল— বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই সব অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর কারণে অধিক বৃষ্টিপাত হয়েছিল। আগামীতেও এই সমস্যা দেখা দেবে। যে আশঙ্কা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

উড়ন্ত নদী ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত হয়। জলীয় বাষ্পের স্তম্ভ দিয়ে গঠিত হয়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল থেকে ঠান্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে বা প্রবাহিত হতে থাকে। এই নদী প্রায় ৯০ শতাংশ জলীয় বাষ্প বহন করে। এসব নদী প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫০০ কিলোমিটার প্রশস্ত হয়। নদীর গভীরতা থাকে প্রায় তিন কিলোমিটার। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে এসব নদী ক্রমেই দীর্ঘ এবং প্রশস্ত হচ্ছে। এই নদী খালি চোখে দেখা যায় না, তবে কোনো কোনো জায়গায় পুঞ্জিভূত মেঘ দেখা যায়।

নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বায়ুমণ্ডলীয় গবেষক ব্রায়ান কান বলেছেন,  উড়ন্ত নদীর অস্তিত্ব ইনফ্রারেড এবং মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে দেখা যেতে পারে।’

উড়ন্ত নদীগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী আমাজনের নিয়মিত পানি প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ নিঃসরণ করে। এর প্রভাবে অল্প সময়ের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে পানি ঝরে। ফলে বিপর্যয়কর বন্যা এবং ভূমিধ্বস দেখা দেয়।

বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো পৃথিবীর নতুন নতুন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। বিশ্বে বিপর্যয়কর বন্যা এবং ভূমিধ্বসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। যদিও সব বায়ুমণ্ডলীয় নদী ক্ষতিকর নয়,  তীব্রতা কম থাকা নদীগুলো উপকারিও হতে পারে। বিশেষ করে যেখানে দীর্ঘদিন বৃষ্টি হয় না সেখানে এই বায়ুমণ্ডলীয় নদী উপকারী হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নদী আছে। এগুলো অনেক দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে।

সূত্র: বিবিসি