ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন করা চিকিৎসকরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে সব হাসপাতালে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢামেক হাসপাতালের নিউরো-সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুল আহাদ এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবির মুখে সরকারের ‘দৃশ্যমান পদক্ষেপ’ ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সব হাসপাতালে আগের মত পুরোদমে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাতে তিন দফায় হামলা ও মারধরের ঘটনায় রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অন্য চিকিৎসকরাও তাদের কর্মবিরতিতে সংহতি জানান। রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতেও কর্মবিরতির ডাক দেন চিকিৎসকরা।
কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণার আগে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা চারটি দাবি নিয়ে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলন করে পুরোদমে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আব্দুল আহাদ বলেন, ‘প্রথম দুটি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হামলাকারীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যেসব হাসপাতাল এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন হয়নি, সেসব স্থানে দ্রুত বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, শিগগিরই এ দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হবে। স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ আরও নিরাপদ হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ দাবি অনুযায়ী স্বাস্থ্য পুলিশ গঠন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের বিষয়ে দীর্ঘ ও তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব। এজন্য একটি কার্যকর কমিটি গঠন করা হবে, যেখানে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধিদল থাকবে। এছাড়া, স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিভিন্ন অসঙ্গতি, যেমন: ক্যাডার বৈষম্য ও রেফারেল সিস্টেমের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
আব্দুল আহাদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। সিনিয়র স্বাস্থ্য সচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে আগের খসড়ার আলোকে আরও তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় চেয়েছে। এই সময়ের ভেতরে পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের খসড়ায় যে অসঙ্গতিগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করবেন এবং আরেকটি খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশিত করবেন। চিকিৎসক সমাজ আলোচনা-পর্যালোচনা করে সেই খসড়ার ওপরে কোনো সংশোধনী থাকলে তাদের পক্ষ থেকে মতামত দেবেন। তারপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন এগিয়ে নেওয়া হবে পাস করানোর জন্য।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাতে তিন দফায় চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মারধরের প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দেন চিকিৎসকরা। রোববার সারা দেশের সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে তারা বৈঠকও করেন।
সোমবার বিকেলে তিন ঘণ্টা বহির্বিভাগ খোলা ও অন্যান্য চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তারা আন্দোলন-কর্মসূচি পালনের কথা জানান। তবে, চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারের তরফ থেকে ‘দৃশ্যমান পদক্ষেপ’ নেওয়ার কথা জানিয়ে মঙ্গলবার তারা পুরোদমে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন।