জাতীয়

সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ কত?

মাওলানা মো. জহিরুল ইসলাম : সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ কত? এ কথার উত্তরে বিভিন্ন হাদিসে পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায় ১. যব ২. খেজুর ৩. পনির ৪. কিসমিস ৫. গম। এর মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক সা দিতে হবে। কেজির হিসাবে এক সা হচ্ছে, ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা সা দিতে হবে। কেজির হিসাবে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম হয়। এটা হলো ওজনের তফাত। আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছেই। হাদিসে এ ৫টি দ্রব্যের যে কোনটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে, যেন মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী এর যে কোনো ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। প্রশ্ন হলো, সব শ্রেণির লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্যমানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদিসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসাবে ফিতরা আদায়ের ওপর আমল করবে কে? আসলে এক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন যে, যে ব্যক্তি উন্নতমানের খেজুরের হিসাবে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেয়ার, সে তাই দিবে। এরচেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিসমিসের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটিই উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী, সাহাবা-তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, আমরা সদকা ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য দ্বারা অথবা এক সা যব অথবা এক সা খেজুর, কিংবা এক সা পনির বা এক সা কিসমিস দ্বারা। আর এক সা-এর ওজন ছিল নবী করীম (সা.) এর সা অনুযায়ী। এ হাদিসে রাসুলের যুগে এবং সাহাবাদের আমলে সদকা ফিতর কোন কোন বস্তু দ্বারা আদায় করা হতো তার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সারাজীবন খেজুর দ্বারাই সদকায়ে ফিতর আদায় করেছেন। তিনি মাত্র একবার যব দ্বারা আদায় করেছেন। ইবনে কুদামা (রা.) আবু মিজলাযের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরামের অধিকাংশই যেহেতু খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন তাই ইবনে উমর (রা.) সাহাবাদের তরিকা অবলম্বনে সারাজীবন খেজুর দ্বারাই আদায় করেছেন। ইমাম শাফেয়ীর (রহ.) মতে উত্তম হলো হাদিসে বর্ণিত বস্তুর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা দেয়া। অন্য সব ইমামের মত এমনই। ইমাম মালিকের (রহ.) কাছে খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত খেজুর দেওয়া উত্তম। আর ইমাম আহমদের (রহ.) মতে সাহাবায়ে কেরামের ইত্তিবা হিসাবে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। ইমাম আবু হানিফার (রহ.) মতেও অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা। সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধা সা গমের মূল্য এক সা খেজুর সমপরিমাণ ছিল।  পরবর্তীকালে মুয়াবিয়ার (রা.) যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল খুব বেশি। সদকা ফিতরের জন্য নির্ধারিত খাদ্যসমূহের মধ্যে গমের মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে, সেকালে আধা সা গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল। মুয়াবিয়ার (রা.) যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা সা গমকে সদকা ফিতরের অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের এক সার মতো গণ্য করা হতো। ইবনুল মুনযির বলেন, সাহাবীদের যুগে যখন গম সহজলভ্য হলো তখন তারা আধা সা গমকে এক সা যবের সমতুল্য গণ্য করলেন। এতে বুঝা যায় যে, মুআবিয়ার (রা.) যুগে গম দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হলো যে, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য। এ সময় ইবনে উমর (রা.) সাহাবাদের অনুকরণে খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করতেন। তখন তাকে আবু মিজলায (রা.) বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা তো এখন সামর্থ্য দিয়েছেন। আর গম খেজুরের চেয়ে অধিক উত্তম। তবুও কেন খেজুর দ্বারা তা আদায় করছেন।’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সাহাবাদের অনুকরণে এমন করছি।’ সাহাবায়ে কেরাম গম দ্বারা এজন্যই সদকা ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। হাদিসে পাঁচ প্রকারের খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। তাহলে এ যুগে সর্ব শ্রেণীর জন্য এমনকি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা কী করে সমীচীন হতে পারে? আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে ফিতরার গুরুত্ব অনুধাবন করে হিসাব করে ফিতরা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : প্রভাষক, আরবি বিভাগ, মেহেরপুর আলীয়া মাদ্রাসা, মেহেরপুরjislam289@yahoo.com

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুলাই ২০১৪/শাহ মতিন টিপু