সারা বাংলা

তীব্র শীত-কুয়াশায় জবুথবু রংপুরের জনপদ

হিম বাতাস আর ঘন কুয়াশায় রংপুরের প্রকৃতি আরো শীতল হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ঘন কুয়াশা পরের দিন বেলা ১২টা নাগাদও কাটে না। সূর্যের দেখা মেলে দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত, তাও শুধুই আলো, কোনো তাপ নেই। এই তীব্র শীতে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। বাহিরে বের হওয়া মানুষের শরীরে উঠছে কয়েক স্তরের মোটা কাপড়। 

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, রংপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

হঠাৎ গতকাল থেকে ফের এমন তাপমাত্রায় একেবারে জবুথবু অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে উত্তরের মানুষজনের মধ্যে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ গবাদি পশু নিয়ে পড়েছে বিপাকে। এমন ঠান্ডায় জ্বর সর্দি কাশ নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা। 

বাজারের শ্রমিক হাশেম আলী বলেন, “ভোরে কাজে বের হতে হয়। কিন্তু হিমেল বাতাসে হাত-পা জমে যায়। কয়েকটা পুরনো কাপড় পরে কোনো রকমে কাজ করি। শরীর ঠিক রাখতে হলে তো খাবারও দরকার, কিন্তু ঠান্ডায় কাজ কম থাকলে উপার্জনও কম হয়।” 

রংপুর শহরের রিকশাচালক রফিক মিয়া বলেন, “সকালবেলা বের হই তো কুয়াশায় ভিজে যাই। ঠান্ডায় এত কষ্ট যে চালানোই যায় না। কিন্তু দিন না করলে পেট চলবে কীভাবে?”

শুধু শ্রমজীবী নয়, বস্তিতে থাকা ছিন্নমূল মানুষদের অবস্থাও আরো করুণ। প্রচণ্ড ঠান্ডায় তারা একেবারেই বিপর্যস্ত। এক ছিন্নমূল বাসিন্দা বলেন, “একটা কম্বল আছে, সেটা দিয়েই কোনোরকম রাত কাটাই। শীতে তো বাচ্চারা কাঁপতে থাকে। কিছুই করার নেই।” 

রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট লাঘবে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিতরণ করা শীতবস্ত্র পর্যাপ্ত নয়। 

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৭ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা আগামী দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। 

তীব্র শীত আর কুয়াশার এই প্রকোপে রংপুর অঞ্চলের জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগ থাকলেও তা আরো বিস্তৃতভাবে বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।