বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৩২টি কারখানার মধ্যে ১৬টির বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্বহীন এ ১৬ প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “গত ২১ জানুয়ারি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মচারী ও শ্রমিকরা গাজীপুরের শ্রীপুর মায়ানগর মাঠে জমায়েত হয়ে লে-অফ প্রত্যাহার করে ফ্যাক্টরিগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা ঘোষণা দেন, ২২ জানুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে ফ্যাক্টরি খুলে না দিলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধসহ শাটডাউন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। বেক্সিমকোর কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক ও দেশবাসীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু, ওই ১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। ১২টি ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক লে-অফ করা হয়েছে, যা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়।”
তিনি আরো বলেন, “তিনটি ফ্যাক্টরি চলমান আছে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত ৩২টি ফ্যাক্টরির বিপরীতে ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকাসহ বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট ব্যাংক ঋণ বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে শুধু জনতা ব্যাংকের পাওনা ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।”
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “সরকার গত ২৪ নভেম্বর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে পারিপার্শ্বিক শিল্প স্থাপনাদি ও জনজীবনে সৃষ্ট অভিঘাত পর্যালোচনা ও তার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় কার্যব্যবস্থার সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে ১১ সদস্যের ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করে।ইতোমধ্যে এ কমিটির পাঁচটি সভা হয়েছে। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জনতা ব্যাংক পিএলসি থেকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক-কর্মচারীদের ৩ মাসের বকেয়া বেতনের সংস্থান করা হয়েছে। এর পরিমাণ সেপ্টেম্বরে ৫৫ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ডিসেম্বরে ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের বেতন উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের আলোকে দেওয়ার প্রস্তুতি আছে।”
তিনি বলেন, “আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে ৫০ কোটি টাকা এবং সরকারের কেন্দ্রীয় তহবিল হতে ১০ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত সরকার মোট ২২৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। অত্যধিক ঋণগ্রস্ত অবস্থায় ফ্যাক্টরিগুলো চালানোর জন্য কোনো ব্যাংকই তাদেরকে নতুন ঋণ দিতে পারছে না।”
উপদেষ্টা বলেন, “দেশের মালিক জনগণ এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিপূর্ণভাবে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই সরকার সমষ্টিগতভাবে জনগণের স্বার্থকেই অগ্রগণ্য বলে বিবেচনা করে।”
তিনি বলেন, “হাইকোর্ট বিভাগে চলমান রিট মামলায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী পরিবর্তন করা হয়েছে এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে আলোচনা করে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া, বেক্সিমকো গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠান বিক্রয়/লিজ প্রদান/হস্তান্তরের লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিবরণী, দায়-দেনা, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে মর্টগেজকৃত সম্পদের বিবরণী, চলমান ব্যবসা ও আয় সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিক্রয়/হস্তান্তর/লিজ প্রদান প্রক্রিয়াধীন আছে।”
উপদেষ্টা জানান, আগামী ২৬ জানুয়ারি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান আর্থিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পরবর্তী সভা হবে। ওই সভায় সর্বশেষ অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং দায়-দেনা ও সম্পদের বিবরণ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, “সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে সর্বদা সজাগ এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা কমিটি সর্বোচ্চ সোচ্চার আছে। সরকার লে-অফ হওয়া কর্মচারী ও শ্রমিকদের বাস্তবতা উপলব্ধি করে ধৈর্যের পরিচয় দিতে আহ্বান জানাচ্ছে এবং দেশের স্বার্থে ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছে।”