সারা বাংলা

দেশজুড়ে শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানি শাসকের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিল, যাদের আত্মত্যাগে বাঙালি পেয়েছিল ভাষার অধিকার, ফুল আর শ্রদ্ধায় তাদের স্মরণ করছে জাতি।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে সমগ্র জাতি। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

খুলনা:  ফুলে ফুলে ঢাকা পড়েছে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনার। ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত এ মিনারের শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়।

শুক্রবার প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তাবক অপণ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, খুলনা সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।  পরে ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা জেলা পরিষদ, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পৃথক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা সিটি করপোরেশন আজ সকাল ৯টায় নগর ভবনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। পরে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার।

ময়মনসিংহ:  ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনসহ রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, জেলা পুলিশ সুপার আখতার উল আলমসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপিসহ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা জানান শহীদদের প্রতি। 

এসময় বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অর্জন মানুষকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।”

বাগেরহাট: একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে বাগেরহাট শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান। এরপর জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুর আরিফ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। 

এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি, বাগেরহাট জেলা বিএনপি ও সহযোগী, বাগেরহাট সড়ক বিভাগ, মৎস্য অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাগেরহাট প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট অহিদুজ্জামান দীপু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি শাহিদা আক্তার।

টাঙ্গাইল:  বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্যদিয়ে টাঙ্গাইলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস পালিত হচ্ছে। 

শুক্রবার একুশের প্রথম প্রহরে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা প্রশাসনের পক্ষে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক। 

পরে জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, পৌরসভার পক্ষে পৌর প্রশাসক শিহাব রায়হান, সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা আক্তার, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের পক্ষে সভাপতি জাফর আহমেদ, জেলা পরিষদ, পিবিআই, নৌ পুলিশ, পৌরসভা, সদর উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভাষা শহীদের প্রতি  পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। 

ঝালকাঠি: শুক্রবার ঝালকাঠিতে শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণ ও রক্তদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে  প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন- পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়, ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাজী খলিলুর রহমান, অতিরিক্ত  জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কাওছার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম। সহযোগিতায় ছিল- বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ঝালকাঠি ইউনিটের সদস্যরা।

জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, “দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ও মুসলমানদের নিয়ে দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন হলেও আমরা ছিলাম তখন বৈষম্যের শিকার। ভাষা নিয়ে বৈষম্যের কারণে ১৯৫২ সালে আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা পেয়েছি, আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার। তরুণরা এখন মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদান করছে। আমরা তাদের সবাইকে রক্তদানের মতো এই মহৎ কাজের জন্য সাধুবাদ জানাই।”

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার কালেক্টর চত্বরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান।

কুষ্টিয়ার জেলা পুলিশ, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাব, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জেলার সব উপজেলাগুলোর সরকারি দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।