সারা বাংলা

‘বড় ভাই আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি...’

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত রাইসুল বাড়িতেই ছিলেন। বিকেল পাঁচটার কিছু সময় পর তার ফোনে কল আসে। রাইসুল ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, “বড় ভাই আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।” 

এই কথা বলে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তিনি। এরপর রাত নয়টার দিকে কল দিলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ছেলের সাথে এই শেষদেখা ও কথা হয়েছিল ঝিনাইদহ শৈলকূপায় নিহত তিনজনের একজন রাইসুল ইসলামের মা রেহেনা পারভীনের। 

নিহত রাইসুল ইসলামের (২৮) বাড়ি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রাম। তবে তার পৈতৃক বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার মানিকদিয়াড় গ্রামে। ২৬ বছর ধরে পিতামাতার সাথে নানার বাড়ি পিয়ারপুরেই থাকতেন। তার নানার নাম ইব্রাহীম সরদার। দুই মাস আগে রাইসুলের পিতা আরজেদ আলীর মৃত্যু হয়।

রাইসুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রাইসুল কোনো সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। কেন, কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা বলতে পারছেন না। তবে সম্প্রতি এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে টাকা লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলছিল তার।

রেহেনা পারভিন বলেন, “একমাত্র ছেলে রাইসুল। রাইসুলের বয়স যখন আড়াই বছর, তখন আমার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর থেকে আমি বাড়িতে থাকা শুরু করি। গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করিয়ে ছেলেকে ঝিনাইদহ কে সি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পড়িয়েছি। এরপর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক পাস করে রাইসুল। বাড়িতেই থাকত, কোনো চাকরি বা ব্যবসা করত না। সম্প্রতি দৌলতপুর থেকে তার বাবার সম্পত্তি বিক্রি করে ৯ লাখ টাকা পায়। সেই টাকার মধ্যে ৭ লাখ টাকা স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে দেয়। সেই টাকা ফেরত নিয়ে কিছু ঝামেলা চলছিল।”

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর মাঠের মধ্যে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের হানিফ আলী, তার শ্যালক লিটন হোসেন ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলামের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে শৈলকূপা থানা পুলিশ। 

তবে, নিহত রাইসুলের বিরুদ্ধে থানায় কোন মামলা বা অভিযোগ নেই বলে জানায় পুলিশ।