লাইফস্টাইল

রোজার নিয়ত ও সাহরির মাসয়ালা

রমজানে রোজা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু বিধান মেনে চলা আবশ্যক। বিশেষ করে রোজার নিয়ত, সাহরি ও ইফতার সংক্রান্ত বিধানগুলো না জানলে রোজার কষ্ট অর্থহীন হয়ে যেতে পারে। নিম্নে কয়েকটি জরুরি মাসয়ালা তুলে ধরা হলো :

নিয়ত সংক্রান্ত মাসয়ালা

১. রমজানের রোজার নিয়ত রাত থেকে দুপুরের ঘণ্টা পূর্বে যে কোনো সময় করলে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। ফরজ রোজার নিয়ত রাতে করাই উত্তম।  ২. সুবহে সাদিক থেকে দুপুরের একঘণ্টা পূর্বে এই নিয়‍ত শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হলো সুবহে সাদিকের পর সর্বপ্রকার পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা। ৩. রমজান মাসে কোনো মুকিম (আবাসে অবস্থানকারী) কোনো রমজানের দিন যদি নফল রোজা বা অন্য কোনো ওয়াজিব রোজার নিয়ত করে তবে তার রমজানের রোজাই আদায় হবে। কেননা রমজান মাস শরিয়ত কর্তৃক ফরজ রোজার জন্য নির্ধারিত। 

৪. অবশ্য কোনো মুসাফির বা অসুস্থ ব্যক্তি রমজানের দিনে অন্য কোনো রোজার নিয়‍ত করলে তা আদায় হয়ে যাবে। আর এই দুই ব্যক্তি যদি কেবল রোজারই নিয়ত করে অর্থাৎ কোনো ওয়াজিব বা কাজার নিয়ত না করে অথবা নফল রোজার নিয়ত করে, তবে রমজানের রোজাই আদায় হবে। ৫. কারো ওপর পূর্ববর্তী রমজানের কাজা ওয়াজিব থাকা অবস্থায় পরবর্তী রমজান এসে গেলে সে বর্তমান রমজানের রোজাই রাখবে। এ ক্ষেত্রে কাজা রোজার নিয়ত করলেও রমজানের রোজা আদায় হবে। ঈদের পরে পূর্ববর্তী বছরের রোজার কাজা করবে।

সাহরি সংক্রান্ত মাসয়াল

১. সাহরি খাওয়া সুন্নাত। সাহরি খাওয়াতে বরকত আছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা সাহরির মধ্যে বরকত নিহিত। (তাবারানি) আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমাদের ও আহলে কিতাবের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (মিশকাতুল মাসাবিহ) ২. সাহরির সময় শেষ রাত। ফকিহ আবুল লাইস (রহ.) বলেন, সাহরির সময় হলো রাতের শেষ ষষ্ঠাংশ। ৩. সাহরি বিলম্বে খাওয়া সুন্নাত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা মাকরুহ। অর্থাৎ এমন সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা মাকরুহ যে সময় সাহরির সময় আছে কিনা তাতে সন্দেহ হয়। 

৪. কোনো কোনো মানুষ মনে করে আজান না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া জায়েজ। এই ধারণা ভুল। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে পানাহার জায়েজ নয়, আজান হোক বা না হোক। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। ৫. রমজান মাসে সাহরি খাওয়ার পর সুবহে সাদিকের পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা জায়েজ। গোসল সুবহে সাদিকের পরেও করা যায়। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। ৬. কারো কারো ধারণা রোজার নিয়ত করার পর সাহরির সময় বাকি থাকলেও আর কোনো কিছু খাওয়া উচিত নয়। এই ধারণাও ভুল। সুবহে সাদিক হওয়ার আগে পানাহার ইত্যাদি জায়েজ আছে, পূর্বে নিয়ত করুক বা না করুক।

৭. সাহরিতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। কেননা সাহরিতে অধিক খাবার গ্রহণ বান্দাকে রোজার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে দেয়। যেমন—শরীরে আলস্য তৈরি করে, জৈবিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়, অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভব করা যায় না। আল্লামা ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) বলেছেন, মানুষ স্বাভাবিক ক্ষুধায় যতটুকু খাবার গ্রহণ করে, সাহরিতে সেই পরিমাণ খাওয়া মুস্তাহাব। অর্থাৎ খুব বেশি বা কম নয়; বরং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা।

৮. খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া সুন্নতের পরিপন্থী এবং স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। অন্তত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে ফজরের নামাজ আদায় করে মসজিদে ইবাদত করতেন, সাহাবিদের দ্বীন শেখাতেন। সূর্যোদয়ের পর ইশরাকের নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরতেন।