আমি যখন খুব ছোট, তখন মা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তখনো ভালো করে ‘মা’ শব্দটা উচ্চারণ করতেও পারতাম না। অথচ সেই শব্দটিই এখন আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় এবং সবচেয়ে কষ্টদায়ক শব্দ। অনেকেই ভাবেন, মা নেই মানেই বুঝি আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু তারা জানে না, প্রতিটি নিশ্বাসে আমি মাকে খুঁজি।
আমার আশেপাশে যত মা-সন্তানের সম্পর্ক দেখি, বুকের ভিতর একটা হাহাকার জমে ওঠে। স্কুলে যখন সবাই মায়ের হাত ধরে আসত, আমি চুপচাপ বসে থাকতাম। কোনোদিন কাউকে বলিনি, আমার মা নেই। কারণ, এই শব্দগুলো উচ্চারণ করতে গেলেই চোখ ভিজে আসে, গলা আটকে যায়।
মা চলে যাওয়ার পর আব্বু যতটা পেরেছেন, আমার যত্ন নিয়েছেন। কিন্তু একটা মায়ের ছোঁয়া, আদর, শাসন—এগুলো পৃথিবীর কেউই দিতে পারে না। অনেক রাতে ঘুম ভেঙে যায়, জানালার দিকে তাকিয়ে থাকি, ভাবি মা কি এখনো আমায় মনে করে? কোথায় আছে তিনি? ভালো আছেন তো?
একবার স্বপ্নে দেখেছিলাম, মা এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। বলছেন, ‘বাবা, আমি তোকে খুব ভালোবাসি।’ ঘুম ভাঙার পর বালিশ ভিজে ছিল চোখের জলে। সে এক গভীর ভালোবাসার তৃষ্ণা, যার কোনো জবাব নেই।
বন্ধুরা বলে, “মাকে নিয়ে গল্প লেখ, কবিতা লেখ।” কিন্তু কীভাবে লিখব, যাকে কখনো জেনে উঠতেই পারিনি, যার মুখ স্পষ্ট করে মনে নেই? তবু মায়ের স্মৃতি গড়ে উঠেছে আমার কল্পনায়। আমি মাকে গড়ে নিয়েছি আমার নিজের মতো করে—তার হাসি, চোখের চাহনি, আমার মাথায় হাত রাখা সবই আমি নিজের হৃদয়ে এঁকে রেখেছি।
আমি জানি না, মা কেনো চলে গিয়েছিলেন, কার দোষে এই বিচ্ছেদ হয়েছিল। কিন্তু আমি কারো উপর রাগ করি না। শুধু চাই, একদিন যদি মা ফিরে আসেন, আমি যেন তাকে জড়িয়ে বলতে পারি, ‘আমি তো তোমাকেই খুঁজে ফিরেছি এত বছর।”
আজো আমি প্রতিদিন মায়ের জন্য প্রার্থনা করি। প্রতিটি কষ্টের মুহূর্তে মাকে মনে করি। কেউ বলুক বা না বলুক, মা তো মা-ই; আমার মা। আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা এবং চিরকালীন অপেক্ষার নাম।
লেখক: শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, কৃষি অনুষদ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়