ক্যাম্পাস

‘আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে কেনো মা?’

সন্ধ্যাবাহিত ওই পথটা ধরে সূর্য মুখ লুকোয় সুবিশাল পাহাড়ের ঘাড়ে, সুবঙ্কিম চাঁদ উঠে খরস্রোতা নদী ভেদ করে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই আমার। শুধু কি তাই! দেখতে দেখতে কখন যে সব কয়টা রোজার পাঁপড়ি ঝরে পড়ে গেছে, সেদিকেও চোখ ফোটেনি। অবশ্য রোজা রেখেছি সবকয়টা।

এই তো মনে হচ্ছে, ঠিক সেদিনের কথা। সেদিন বিদ্যুৎ চলে যায় হঠাৎই। ফোনটা রেখে দিয়ে ছাদে আসি। বাহ! কি সুন্দর চাঁদ। একি আজকে দেখি চাঁদ রাত। তার মানে আগামীকাল ঈদ। কীভাবে কেটে যায় সময়! মুঠোফোন আর ভার্চুয়াল জগতে এতটাই নিমজ্জিত ছিলাম যে জাগতিক সবকিছুরই মাথা খেয়ে বসে আছি। একেবারে সব কিছুরই; মা যে তাই বলে!

বিদ্যুৎ না গেলে বাইরে বের হবার সুযোগটাও বোধহয় হত না, চাঁদ দেখার সুযোগটাও পেতাম না। একাই বসে আছি ছাদের এক কোণে। কিছুক্ষণ পরেই একটা কয়েল নিয়ে ছাদে আসেন মা। আমার খেয়াল ছিল না সেদিকে। মা পাশে এসে বসেন। আমার দিকে না তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন,

- চাঁদ দেখিস?

- হ্যাঁ।

- মনে আছে ছোটবেলায় ছাঁদে এভাবেই দাড়িয়ে থেকে কোলে নিয়ে তোকে ঈদের চাঁদ দেখাতাম?

আমি মায়ের আরেকটু কাছে গিয়ে বলি,

- মনে আছে। কিন্তু তুমি তখন ঈদের চাঁদ না দেখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে কেনো মা?

মা হাসি দিয়ে বলেন,

- আরে পাগল তুই তো হচ্ছিস আমার ঈদের চাঁদ, তোকে দেখব না তো কাকে দেখব!

- মা, আজও ইচ্ছে করছে তোমার কোলে বসে ঈদের চাঁদ দেখি!

মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন,

- ইচ্ছে করে আকাশের চাঁদকে ছেড়ে সারাদিন তোকে দেখি। কিন্তু তোর তো সময় নেই আমার জন্য। মোবাইল ফোনটাই তো এখন তোর মা হয়ে গেছে।

- কি বলো মা!

মা চুপ করে নিভৃতে তাকিয়ে থাকে আকাশ পানে। আমি মায়ের কাছাকাছি গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাকে জড়িয়ে ধরে বলি, “ভুল হয়ে গেছে আম্মু। আর কখনো ভুল হবে না।”

- আচ্ছা। ঠিক আছে। কাছে আয় তোর চোখের জল মুছে দিচ্ছি। কাঁদতে হবে না পাগল ছেলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আম্মুর সঙ্গে ঈদের চন্দ্রবিলাস এ–ই প্রথম। আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,

- এখন গিয়ে সোজা ঘুম দিবি। অকারণে ফোন চালান যাবে না। সকালে উঠে ঈদের নামাজ পড়তে যেতে হবে। আর সারপ্রাইজ আছে তোর জন্য।

- ঠিক আছে।

মায়েরা এমনই হয়। সন্তানের ভুলগুলো অতি সহজেই ক্ষমা করে দেন। মা বলেন, আমি নাকি হাঁসের মত। হাঁসকে জলের উপর যেরকম স্থির লাগে, পানির নিচে ঠিক ততটাই অস্থির থাকে তার পা। আমার হয়েছে সেই অবস্থা। মনে মনে স্থির হয়ে আছি ঠিকই কিন্তু অস্থির হয়ে আছে আমার মানসপট। আমার আর ঘুম কি হবে! চিন্তা করতে থাকি, আম্মু কি সারপ্রাইজ দিতে পারে আমাকে! 

লেখক: শিক্ষার্থী, লেভেল- ৫, সেমিস্টার- ১, ফ্যাকাল্টি অব অ্যানিমেল হাসবেন্ড্রি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।