আজ এমন একজন মানুষকে নিয়ে লিখছি, যার সঙ্গে আমার সমস্ত আবেগ, ভালোবাসা আর অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে। তাকে ব্যাখ্যা করার মতো শব্দ আমার জানা নেই। জানেন তিনি কে? তিনি আমার মা—একজনই, কিন্তু তার মধ্যেই বাবা, মা, বন্ধু; সব রূপ মিশে আছে।
আমার শৈশব আর কৈশোর কেটেছে শুধুই এই মানুষটার সঙ্গে। বাবা ছিলেন দেশের বাইরে। ২০১১ সালে আমি যখন ৫ বছর বয়সী, তখন তিনি চিরবিদায় নেন। আল্লাহ জান্নাত দান করুন আব্বুকে, আমিন।
বাবার মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। খিঁচুনিতে কাঁপছিলাম। সেদিন রাতে আম্মুর আতঙ্কিত মুখ আজো চোখে ভাসে। তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো আমিও হারিয়ে যাব। কিন্তু না, আজো আমি বেঁচে আছি শুধুই তার ভালোবাসা আর যত্নে।
একদিন কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “তোমার সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত কোনটি?” আমি চোখ বন্ধ করে বলেছিলাম, “আমার মায়ের হাসির মুহূর্ত।”
আবার কেউ জানতে চাইল, “সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত?” আমার উত্তর তখনো একইরকম; সহজ, কিন্তু ভারী— “মায়ের ভারী মন, মায়ের কষ্ট।”
আমার মা খুব নরম মনের একজন মানুষ। কেউ একটু ভালোভাবে কথা বললেই, তিনি নিজের সাধ্যমতো সাহায্য করতে ছুটে যান। মাঝে মাঝে তিনি ভেঙে পড়েন। বলেন, “তোর আব্বু তোদের ছোট রেখে চলে গেছে। তোদের মানুষ করাটা আমার দায়িত্ব ছিল। বড় করে দিলাম। এবার আমি চলে গেলেও শান্তি!”
এই কথাটা আমার জীবনের সবচেয়ে ভারী অনুভূতির একটি। আমি জানি, এই মানুষটা ছাড়া আমি কিছুই না। এই ব্যস্ত, কঠিন দুনিয়ায় আমার মা ছাড়া আমাকে বোঝার, ভালোবাসার আর কেউ নেই।
আম্মু এখন মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি জানি না, আল্লাহ আমার জন্য কী রেখেছেন, তবে আমি বিশ্বাস করি—আল্লাহ কখনো কোনো মানুষের দোয়া ফেরান না। আর আমার একটাই প্রার্থনা, মায়ের আগেই যেন আমিই বিদায় নেই।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সব বাবা-মা। আর চিরভালো থাকুক, আমার মা।
(লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, অর্থনীতি, নোয়াখালী সরকারি কলেজ)