ক্যাম্পাস

মা কখনো রাগ করেন না 

আমরা দুই ভাই-বোন। ভাইয়া আমার থেকে তিন বছরের বড়। আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয়, সবচেয়ে নির্ভরতার নাম, মা। আমাদের মায়ের নাম রোজিনা বেগম। তিনি একজন গৃহিণী হলেও তার পরিচয় এখানেই শেষ নয়। তিনি একাধারে আমাদের বন্ধু, শিক্ষক, চিকিৎসক, রাঁধুনি এবং ফ্যাশন ডিজাইনার।

বাবা প্রতিদিন অফিসে যান, ব্যস্ততায় কাটে তার দিন। আর মা, তিনি তার সমস্ত সময় উৎসর্গ করেন আমাদের জন্য। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় তার কাজ। আমাদের ঘুম থেকে তোলা, খাবার বানানো, স্কুলের প্রস্তুতি, পড়াশোনা—সবকিছুর কেন্দ্রেই তিনি।

মা কোনো মেডিকেল কলেজে পড়েননি। কিন্তু যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমার সবচেয়ে বড় ডাক্তার হয়ে ওঠেন। সারারাত আমার পাশে বসে থাকেন, মাথায় পানি দেন, সময়মতো ওষুধ খাওয়ান। তার মায়া-মমতায় রোগ যেন আপনাতেই সেরে যায়।

মা জানেন আমি কী খেতে ভালোবাসি, আর কী একদমই পছন্দ করি না। তিনি প্রতিদিন চেষ্টায় থাকেন আমার প্রিয় খাবার তৈরি করতে। কোনোদিন খেতে না চাইলে তার মুখেও একফোঁটা পানি পড়ে না। রান্নাঘরের প্রতিটি পদেই মিশে থাকে তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

পোশাক পরার সময় মা বলেন, “এটা পরো, এতে তোমাকে সুন্দর লাগবে।” তখন মনে হয়, তিনি আমার ব্যক্তিগত ফ্যাশন ডিজাইনার। স্কুল বা পরীক্ষার সময়ে তিনি একজন শিক্ষক হয়ে যান। ধৈর্য ধরে পড়া বোঝান, সাহস জোগান, পাশে থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলেন।

মায়ের ভালোবাসা কেবল আমার জন্যই নয়, ভাইয়ার জন্যও সমান। আমরা কখনো ভয় পেলে, দুঃখ পেলে কিংবা খুশি হই। সব অনুভবেই মায়ের ছায়া খুঁজে পাই। মা কখনো রাগ করেন না, সবকিছুই ভালোবাসা দিয়ে সামলে নেন।

মা যদি কোথাও যান, আমি যেন অন্ধকারে হারিয়ে যাই। এক মুহূর্ত দূরে থাকলেও মনে হয় শত বছর দেখা হয়নি। মায়ের কণ্ঠ, তার স্পর্শ, উপস্থিতি—সবকিছু আমার কাছে শান্তির প্রতীক।

মা আমাকে ১০ মাস গর্ভে ধারণ করেছেন, অসীম কষ্ট সয়ে জন্ম দিয়েছেন। অথচ আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারি না। আমরা না খেলে মা-ও কিছু খেতে পারেন না। তার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, অমলিন।

পৃথিবীতে সব মাই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু আমার কাছে, আমার মা সবচেয়ে অনন্য। তিনি শুধু একজন মা নন, তিনিই আমার পুরো পৃথিবী, আমার শক্তি, আমার আশ্রয়। তার ছায়ায় আমি নিরাপদ, আনন্দিত আর পরিপূর্ণ।

(লেখক: শিক্ষার্থী, ষষ্ঠ শ্রেণি, মসলিম কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়, কালীগঞ্জ, গাজীপুর)