ক্যাম্পাস

মা-ই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব

মা, এই একটা শব্দেই যেন আমি পুরো পৃথিবীকে খুঁজে পাই। আমার জীবনের শুরু থেকে আজ অবধি যার ছায়ায় আমি বেঁচে আছি, তিনি আমার মা। তাকে নিয়ে লিখতে বসলে কলম থেমে যায়, কারণ কোনো ভাষাতেই তার ভালোবাসা, ত্যাগ আর সংগ্রামের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা যায় না।

আমার মা একজন গৃহিণী। কিন্তু তার জীবনটা কখনোই সহজ ছিল না। ২০২০ সালে কোভিড এর সময় বাবার চাকরি চলে যায়। আমাদের সংসারে অভাব নেমে আসে। সে সময় অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু মা এক পা-ও পেছিয়ে যাননি। তিনি সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। রাতে আমরা ঘুমিয়ে পড়লে, মা রাত জেগে সেলাই মেশিন চালাতেন।

অনেকবার দেখেছি, তার আঙুলে কাটা দাগ, চোখে ঘুম নেই। তবুও সকাল হলেই হাসিমুখে আমাদের মুখে ভাত তুলে দিচ্ছেন। আমার ছোট ভাইকে নিয়ে সারাদিন কত খাটুনি যায়, আমি শুধু ভাবি মায়েরা বোধ হয় এমনই হয়।

আমার পড়াশোনার জন্য তিনি কী-না করেছেন! করোনার সময় যখন বাবা চাকরি হারালেন! মা দিন রাত সেলাই করতেন, হাটু ব্যথা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি সেলাই করে যেতেন, যাতে আমার পড়াশোনার কোনো সমস্যা না হয়! সেদিন আমি বুঝেছিলাম, মায়ের ভালোবাসা কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনীয় নয়। আমাদের ভালো রাখার জন্য তিনি নিজের স্বপ্নগুলো ত্যাগ করেছেন। অথচ কোনোদিন একবারও অভিযোগ করেননি।

আমার মা শুধু ত্যাগী নন, তিনি সংগ্রামী। একবার ছোটবেলায় আমি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমাকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়ে বেরিয়েছেন। হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি সারারাত জেগে ছিলেন। আমাদের সামান্য জমানো টাকা দিয়েই আমার চিকিৎসা চালিয়েছেন। সেই মুহূর্তগুলো আজো আমার মনে খোদাই করা।

আজ আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, এর পিছনে আমার মায়ের অবদান অনেক। বয়সের ভারে মা এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। কিন্তু আমি জানি—তার প্রতিটা কষ্টই আমার জীবনের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। আমি যতটুকু যা পেরেছি, তার পেছনে আমার মায়ের অদৃশ্য শক্তিই কাজ করেছে।

আমার মা শুধু একজন নারী নন, তিনি আমার জীবনের ছায়া, প্রেরণা এবং ভালোবাসার উৎস। আমি জীবনে ততটুকু সফল হতে চাই, যা দিয়ে আমি আমার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারব। তার ত্যাগ ও সংগ্রাম আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়, আর কিভাবে ভালোবাসা দিতে হয় নিঃস্বার্থভাবে। মা-ই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব।

(লেখক: শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ, অর্থনীতি বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)