খেলাধুলা

চোখের জলে, উষ্ণ অভ্যর্থনায় ম্যানসিটি ছাড়লেন ডি ব্রুইন

ম্যানচেস্টার শহরের আকাশে আজ অন্যরকম রঙ। উচ্ছ্বাস আর বিষাদের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। প্রায় এক দশকের সম্পর্কের শেষ অধ্যায় লিখলেন বেলজিয়ান মিডফিল্ড জাদুকর কেভিন ডি ব্রুইন। মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে বোর্নমাউথের বিপক্ষে মাঠে নামা ম্যাচটি ছিল তার ম্যানচেস্টার সিটি অধ্যায়ের শেষ। আর সেই মঞ্চে আবেগ যেন ছাপিয়ে গেল ফুটবলকে।

৭০ মিনিট মাঠ মাতিয়ে, সমর্থকদের করতালির ভেতর দিয়ে বিদায় নিলেন এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্লেমেকার। তার চোখের কোণে ছিল জল। ঠোঁটে ছিল স্মৃতিমাখা হাসি। গ্যালারির ৫০ হাজার দর্শক যেন একযোগে জানালেন ভালোবাসা, আর ডি ব্রুইনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল স্মৃতির সুর।

২০১৫ সালে জার্মান ক্লাব উলফসবার্গ থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিয়েছিলেন ডি ব্রুইন। তারপরের ইতিহাস শুধুই সাফল্যের। ৬ বার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা, ২০২৩ সালের ঐতিহাসিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, দু’বারের পিএফএ বর্ষসেরা খেলোয়াড়— এই সবই রয়েছে তার ঝুলিতে।

তবে শুধু ট্রফি নয়, ডি ব্রুইনে হয়ে উঠেছিলেন মাঠে সিটির ছন্দের যোগানদাতা। তার পাসিং, ভিশন এবং নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গোলের মুহূর্ত। যা ইংলিশ ফুটবল ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

ম্যাচ শেষে ডি ব্রুইনে যখন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কথা বলেন, তখন গ্যালারির আবেগ আর ধরে রাখা যাচ্ছিল না, ‘‘এই শহরেই আমার সন্তান বড় হয়েছে। এখানেই আমার বন্ধুরা, আমার হৃদয়। ১০ বছর যে এভাবে কেটে যাবে, কখনো ভাবিনি। এখন আমি যাচ্ছি। কিন্তু ফিরে আসব—একজন বন্ধু হয়ে, একজন পরিবারের সদস্য হয়ে।’’

এসময় আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না ম্যানসিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। একজন প্রিয় শিষ্যের বিদায় তার চোকে জল এনে দেয়।

সিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডি ব্রুইনের সম্মানে ক্লাব ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হবে একটি মূর্তি। এটি শুধুই তার কীর্তির স্বীকৃতি নয়, বরং প্রতীক হয়ে থাকবে কীভাবে একজন খেলোয়াড় একটি ক্লাবের ইতিহাস হয়ে উঠতে পারেন।

ডি ব্রুইনের পরবর্তী ঠিকানা নিয়ে জল্পনা চলছে। কেউ বলছেন, হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএস লিগে পাড়ি দেবেন তিনি। আবার কেউ বলছেন, ইউরোপেই থাকতে চান এই বেলজিয়ান তারকা। তবে এখনো তিনি নিজেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি।

ফুটবল শুধু গোল, পয়েন্ট আর ট্রফির খেলা নয়; এটি আবেগ, সম্পর্ক আর ভালোবাসার গল্পও বটে। কেভিন ডি ব্রুইনের বিদায় সেই কথাই আরও একবার প্রমাণ করে দিল। ম্যানচেস্টার সিটি হয়তো এবার অন্য কাউকে খুঁজে নেবে মাঝমাঠে। কিন্তু ‘কেভিন’ নামটা থেকে যাবে চিরকাল।