সরকারি তিতুমীর কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিতে পূর্ণ পুনর্বহালের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শনিবার (২৪ মে) আয়োজিত এ কর্মসূচিতে কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি একজন সৎ, নিরপেক্ষ এবং আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কলেজে পাঠদানে নিয়োজিত ছিলেন। একজন সম্মানিত শিক্ষকের মানহানি শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকি।
স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি আগামীকাল রবিবার (২৫ মে) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তিতুমীর কলেজের গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাসিবুর রহমান বলেন, “একটি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো শিক্ষা। কিন্তু সেই শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ শিক্ষক। শিক্ষকই যদি বাকস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে জাতি কীভাবে সত্য ও ন্যায়ের শিক্ষা পাবে?”
তিনি বলেন, “সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান বৈষম্যবিরোধী বক্তব্য ও সামাজিক মাধ্যমে সরকারের কিছু প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে মত প্রকাশ করে। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে সরকারি চাকরিজীবীদের সীমাবদ্ধতা, বৈষম্য এবং প্রশাসনিক জটিলতার কথা তুলে ধরেন। এছাড়া দৈনিক পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জনপ্রশাসন ব্যবস্থার অসঙ্গতি নিয়েও সরব হন তিনি। একজন শিক্ষক যৌক্তিক সমালোচনা করলে তাকে চাকরি হারাতে হবে কেন? একজন সরকারি কর্মচারী কি শুধুই সরকারের আদেশ পালনের যন্ত্র, নাকি তিনি জনগণের সেবক এবং একজন চিন্তাশীল নাগরিক?”
তাসিবুর রহমান বলেন, “ড. মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী। আমরা তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং তাকে সরকারি তিতুমীর কলেজে পূর্ণ মর্যাদায় পুনর্বহালের দাবি জানাই।”
তাসিবুর রহমান আরো বলেন, “এই দাবি শুধু একজন শিক্ষকের পক্ষে নয়, বরং গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজের চিন্তার স্বাধীনতার পক্ষে। বাকস্বাধীনতা হরণ করে কোনো জাতি এগোতে পারে না। আমরা ইতিমধ্যে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানবন্ধন করেছি,গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করছি এরপর কঠোর কর্মসূচির দিকে অগ্রসর হব।”
গণিত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহ তানবির বলেন, “বাংলাদেশের শিক্ষা খাত দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। ২৪ পরবর্তী সরকারের উচিত ছিল একটি স্বাধীন শিক্ষা কমিশন গঠন করে শিক্ষার সর্বস্তরে সংস্কার আনা। কিন্তু তারা তা না করে শিক্ষক নিয়োগে অব্যবস্থাপনা, মেধাবীদের অবমূল্যায়ন এবং অহেতুক ওএসডি ও বদলির মাধ্যমে শিক্ষকদের অপমান করেছে।”
তিনি বলেন, “এই অন্যায়ের শিকার হয়েছেন কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান। বৈষম্যবিরোধী বক্তব্য ও লেখালেখির কারণে তাকে ওএসডি, পদোন্নতি বঞ্চনা ও বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি করা হয়েছে। অনার্স পর্যায়ের গণিতের উপর ১১টি বইয়ের লেখক এমন একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষককে দমন নয়, সম্মান জানানো উচিত। তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাকে কলেজে সম্মানের সঙ্গে পুনর্বহাল করার দাবি জানাচ্ছি।”