জাতীয়

সদরঘাটে স্বস্তির ঈদযাত্রা

আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক ও রেল স্টেশনগুলোর পাশাপাশি এবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও দেখা যাচ্ছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। এবার সদরঘাট হয়ে নৌপথে মানুষজন বেশ স্বস্তি ও নিরাপত্তার কথা বলেছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই লঞ্চ টার্মিনালের বিভিন্ন ঘাটে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। কেউ আগেই টিকিট কেটে কেবিনে উঠেন। কেউ কেবিন না পেয়ে ডেকে জায়গা নেন। কারো চোখে ঈদের উচ্ছ্বাস, কারো চোখে দীর্ঘ পথ শেষে প্রিয়জনের মুখ দেখার প্রতীক্ষা।

লঞ্চেই স্বস্তির যাত্রা বরিশালগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের যাত্রী কালাম গাজী বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হলেও ঈদে লঞ্চেই যাই। বাসে এখন ভাড়া বেশি, তাছাড়া পরিবার-পরিজন নিয়ে লঞ্চই সবচেয়ে আরামদায়ক। শান্তির মতো লঞ্চে যাত্রা আর কিছুতে হয় না।”

ভোলাগামী যাত্রী আরিফ হাসান বলেন, “ভোলায় যাওয়ার একমাত্র ভরসা নৌপথ। এবার যাত্রাটা ব্যতিক্রম-বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে না কেউ, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীও নেয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির জন্য মালিকরা সুবিধা করতে পারছে না।”

বরিশালগামী যাত্রী পারভেজ বলেন, “পদ্মা সেতুর কারণে ভিড় আগের মতো না থাকলেও পরিবার নিয়ে আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য লঞ্চই বেছে নিই। রোজার ঈদে যেতে পারিনি, এবার না গেলে চলবে না।”

ব্যতিক্রমী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এবার দেখা যাচ্ছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা প্রস্তুতি। প্রতিটি লঞ্চে মোতায়েন আছেন ৪ জন করে আনসার সদস্য। এর পাশাপাশি কাজ করছেন ডিএমপি, র‌্যাব, নৌপুলিশ, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস এবং বিআইডব্লিউটিএর সদস্যরা। সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও রয়েছেন নজরদারিতে।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মো. মোবারক হোসেন বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে রয়েছেন। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ সেভাবে পাইনি। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় যাত্রা এবার অনেক স্বস্তিদায়ক।”

নৌপুলিশের একজন উপপরিদর্শক বলেন, “নদীতে নিয়মিত টহল চলছে। সদরঘাটে যাত্রীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। যাত্রীদের কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

বাড়তি লঞ্চ, আগাম সার্ভিস ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে বুধবার (৪ জুন) রাত থেকেই শুরু হয়েছে ঈদের বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস, চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন যাত্রী সংখ্যার ওপর নির্ভর করে সাত থেকে আটটি লঞ্চ যাতায়াত করছে। অন্তত ১৬টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে এই সেবার জন্য।

এমভি সুন্দরবন-১৫ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. কবির হোসেন বলেন, “চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি লঞ্চ নামাতে হয়েছে। এবার টার্গেট অনুযায়ী টিকিট বিক্রি হয়েছে। কোনো বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়নি।”

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, “এবার যাত্রীরা স্বস্তিতে যাত্রা করছেন এটা আমাদের বড় প্রাপ্তি। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছি।দুই ঈদের সময়ই আমাদের ব্যবসার বড় মৌসুম। পরিবার নিয়ে অনেকে লঞ্চেই যাতায়াত করতে চান, তাই আমরা চেষ্টা করছি সেবা নিশ্চিত করতে।”

সীমাবদ্ধতা ও জনভোগান্তি যদিও নৌযাত্রায় স্বস্তি থাকলেও সমস্যা একেবারে নেই তা নয়। সদরঘাটের যাত্রীরা গুলিস্তান থেকে অনেকটা পথ হেঁটেই পৌঁছাচ্ছেন ঘাটে। ঈদের সময় রাজধানীতে যানজট বাড়ে, আর সদরঘাট তার অন্যতম ভুক্তভোগী এলাকা।

এছাড়া কেবিনের অগ্রিম চাহিদা বেশি থাকলেও এবার কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। কেবিন টিকিট পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি, তবে ডেকে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি।

বিআইডব্লিউটিসির নৌযান বা রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলো এবার ঈদে যাত্রীসেবায় কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী। ভাড়ার দিক থেকে বেসরকারি লঞ্চের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে মানুষকে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক শেখ মো. সেলিম রেজা বলেন, “ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে এবার যাত্রীর চাপ অনেক বেশি হবে। তাই আমরা যাত্রী সেবায় বাড়তি প্রস্তুতি রেখেছি। আশা করি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে।”

বরিশাল শহরে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা নেয়ামুল করিম। তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুর যুগে এসেও নদীপথের গুরুত্ব কমেনি। বরং নিরাপদ, স্বস্তিদায়ক ও পারিবারিক ঈদযাত্রার জন্য এখনো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রথম পছন্দ লঞ্চ। সরকার, লঞ্চ মালিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারের ঈদযাত্রা যেমন শৃঙ্খলিত, তেমনি স্বস্তিদায়কও।”