আন্তর্জাতিক

কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি ‘উচ্চ-স্তরের অভিযান’ শুরু করতে প্রস্তুত। কম্বোডিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ নতুন করে শুরু হওয়ার পর থাই সেনাবাহিনী এমন কঠোর মন্তব্য করল। 

শুক্রবার (৬ ‍জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) থাই সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশটির গোয়েন্দা তথ্য ‘উদ্বেগজনক’ ইঙ্গিত পেয়েছে যে, কম্বোডিয়া তাদের ভাগ করা সীমান্তে তার সামরিক প্রস্তুতি বাড়িয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী এখন একটি উচ্চ-স্তরের সামরিক অভিযানের জন্য প্রস্তুত।”

থাই পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (থাই পিবিএস) অনুসারে, দেশটির সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীও তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি বাড়িয়েছে।

থাই পিবিএসের প্রতিবেদন অনুসারে, থাইল্যান্ডের ১২তম পদাতিক রেজিমেন্ট অব দ্য রয়েল গার্ডসের কমান্ডার কর্নেল চাইনারং কাসি বলেছেন, তার সৈন্যদের সমস্ত সরঞ্জাম ঠিকঠাক আছে কিনা তা পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ২৮ মে, কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, কম্বোডিয়ার প্রিয়াহ ভিহিয়ার প্রদেশ ও থাইল্যান্ডের উবোন রাতচাথানি প্রদেশের মধ্যে একটি বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে একটি সংক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধের সময় থাই সৈন্যরা তাদের একজন সৈন্যকে গুলি করে হত্যা করেছে।

মন্ত্রণালয় থাই সৈন্যদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে একটি কম্বোডিয়ান সামরিক পোস্টে প্রথমে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছে। তবে থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই দাবি করেছেন, কম্বোডিয়ান বাহিনী প্রথমে গুলি চালিয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ দুটি বছরের পর বছর ধরে প্রিয়া ভিহারের সীমান্ত অঞ্চলে বারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে, যেখানে ৯০০ বছরের পুরোনো একটি মন্দির দশকের পর দশক ধরে চলা বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত, যা সীমান্তের উভয় পাশে জাতীয়তাবাদী মনোভাবকে উস্কে দিয়েছে।

২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি মারাত্মক সংঘর্ষ সংঘটিত হয়, যার ফলে প্রায় ৪০ জন নিহত হয়, যার মধ্যে পাঁচজন বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন।

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) প্রিয়া ভিহার মন্দিরের আশেপাশের জমি কম্বোডিয়াকে দেওয়ার এবং থাইল্যান্ডকে ওই অঞ্চলে অবস্থানরত কর্মীদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ার ১৯৬২ সালের রায় বহাল রাখেন।

তবে থাইল্যান্ড ১৯৬০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আইসিজে-র এখতিয়ারকে স্বীকৃতি দেয়নি। দেশটি বরং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।

থাইল্যান্ডের সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, “থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার ইতিমধ্যেই এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থা রয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি এবং স্যাটেলাইট চিত্র ও অন্যান্য যাচাইকৃত প্রমাণের ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রতিবেশী হিসেবে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে।”

সীমান্ত সীমানা নির্ধারণের সমস্যাগুলো সমাধানকারী কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড যৌথ সীমান্ত কমিশনের একটি সভা ১৪ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।