হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তির তিনদিন পর সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক। তিনি অভিযোগ করেন, সাড়ে ৬ বছর শিক্ষকতাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকার কারণেই একটি চক্র তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি হেয়াত মামুদ ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
মাহমুদুল হক জানান, বেরোবির সাবেক উপাচার্য ড. কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশে তার ভূমিকা ছিল অগ্রণী। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি মহল জাতীয় পতাকা চারকোনা আকৃতি করে ছাপিয়েছিল। তার প্রতিবাদে তিনি নিজেই পতাকা অবমাননার মামলা করেছিলেন। এরপর থেকেই অজানা চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির সুবাদে এই নগরীতে (রংপুর) তার বসবাস মাত্র সাড়ে ছয় বছরের। এই স্বল্প সময়ে রংপুর নগরীর হাজিরহাট থানার নামও তিনি ভালো করে জানেন না, অথচ সেই থানার একটি মিথ্যা মামলায় তাকে ৫৪ নম্বর আসামি করে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাদীকেও চিনেন না তিনি। তার দাবি, কোনো তদন্ত ছাড়াই তাকে গ্রেপ্তার করে নেওয়া হয় কোতোয়ালী থানায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ড আদালতে হাজিরা দিয়ে পরে পাঠানো হয় কারাগারে।
এ ঘটনাকে ‘সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে মাহমুদুল হক জানান, তার বিরুদ্ধে করা দুইটি মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। মামলাকারী এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ এবং কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন এই শিক্ষক।
গত বছরের ২ আগস্ট রংপুর নগরীর হাজিরহাট এলাকায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় শমসের নামে এক ব্যক্তির। ১০ মাস পর তার মৃত্যুকে জুলাই বিপ্লবের হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে রংপুর মহানগরীর হাজিরহাট থানায় হত্যা মামলা করেন ওই ব্যক্তির পরিবার। মামলায় ৫৪ নম্বর আসামি করা হয় শিক্ষক মাহমুদুল হককে।
গত ১৯ জুন দুপুরে ওই মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হন শিক্ষক মাহমুদুল হক। তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত রবিবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় জামিনে মুক্ত হন শিক্ষক মাহমুদুল হক।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুর ১২টায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলামের বিচার করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একাডেমিক ভবন ৩ এর সামনে থেকে মিছিলটি নিয়ে বেরোবি প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। পরে উপাচার্য ও প্রক্টরের কাছে তারা তাদের দাবি জানান।
এতে শিক্ষার্থীরা , এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত চান দেখতে চান।কেন ১৬ জুলাই হত্যাকান্ডে মুলহোডাদের গ্রেফতার না করে তাকে কেন গ্রেফতার করা হল এ বিষয়ে প্রশ্ন রেখে যান।
অবস্থান কর্মসূচিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জেবিন বলেন, “আমাদের শিক্ষককে পুলিশি তদন্তের কথা বলে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ ৮ মাস জেলে রাখা হয়। যতবার কথা বলেছি তারা বলেছে ,তদন্তের স্বার্থে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন প্রসিকিউটর বলছেন, ‘তিনি মুল হোতা। তার নির্দেশে গুলি করা হয়েছে।’ কিন্তু ১৬ জুলাই আবু সাঈদের বুকে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। তাদের না ধরে কেন আমাদের শিক্ষককে ধরা হয়েছে। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী ইবরাহীম বলেন, “আমাদের শিক্ষককে পরোয়ানা জারি না করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের দাবি হলো- তিনি হলেন ২৪ নম্বর আসামি। বাকিদের গ্রেপ্তার না করে তাকে কেনো গ্রেপ্তার করা হলো? আমরা চাই ন্যায় বিচার। তাই এ বিষয়ে ঢাকা থেকে তদন্ত না করে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় এসে তদন্ত করতে হবে।”