সারা বাংলা

বর্ষায় হাঁটুপানির মধ্যে কুমিল্লার ধর্মপুর খাদ্য গুদাম

বর্ষা এলেই হাঁটুপানিতে ডুবে যায় কুমিল্লার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সংরক্ষণাগার ধর্মপুর খাদ্য গুদাম। জেলার সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দুর্যোগকালীন সাধারণ মানুষের জন্য যেখান থেকে খাদ্য সরবরাহ হয়, সেই গুদামঘরই এখন নিজেই বাঁচার সংকটে।

দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতায় গুদামের চারপাশ রূপ নিয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। গরমে দুর্গন্ধে চলাফেরা দায়, বর্ষায় পানি জমে হাঁটু পর্যন্ত। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সরকারি এই স্থাপনাটি।

গুদামের ১৪টি ঘরের মধ্যে সাতটি অচল, একটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত। কার্যকর ঘরগুলোতে সাড়ে ছয় হাজার টনের বেশি শস্য রাখা গেলেও পরিবেশের কারণে সেগুলোও ঝুঁকির মধ্যে। কর্মীরা বলছেন, শস্যের গুণগত মানও ঠিক রাখা যাচ্ছে না।

শ্রমিক মোহাম্মদ আলী বলেন, “প্রতিদিন এই পানির ভেতর দিয়ে চাল-গম ওঠাই, নামাই করি। পায়ে ঘা হয়ে গেছে, চুলকানিও হয়। এত দুর্ভোগের কথা কে ভাবে?”

এক পরিবহন চালক আবুল কাশেম বলেন, “বর্ষায় তো ট্রাকই ঢুকতে পারে না। রাস্তা পানির নিচে। অনেক জায়গায় গর্ত হয়ে গেছে। মাল নামাতে গিয়ে রোদে-বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।”

গুদাম ভবনের একাংশে সাময়িকভাবে মেঝে উঁচু করে সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এটি স্থায়ী সমাধান নয়। 

সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, “আমাদের পাশ দিয়ে যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন গেছে, সেটি উন্নয়নের সময় পানি বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনকে অনেকবার বলেছি, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি।”

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেন, “ধর্মপুর খাদ্য গুদামের জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমরা জানি। সমস্যা নিরসনে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে, তবে এখনো তা একনেকে অনুমোদন পায়নি। আশা করছি, নতুন অর্থবছরে বাজেট অনুমোদিত হবে।”

জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার বলেন, “কুমিল্লার জলাবদ্ধতা বড় সমস্যা। খাল ও জলাধার দখল ও ভরাটের কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমরা নতুন একটি গুদাম তৈরির বিষয়ে সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আছি।”

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, জলাবদ্ধতার শুরু ২০১৭ সাল থেকে। আশপাশের ড্রেন ও বৃষ্টির পানি জমে এখানে আটকে যায়। পাশেই একটি প্রাকৃতিক নালা থাকলেও স্থানীয়রা সেটি ভরাট করে ফেলেছেন।

সম্প্রতি গুদাম এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, সড়ক উঁচু করার চিন্তা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হবে।

এলাকাবাসীর আশঙ্কা এই অব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকলে দুর্যোগের সময় কুমিল্লার খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। তাদের আহ্বান, “কর্তৃপক্ষ যেন আর দেরি না করে শস্যের নিরাপত্তা মানেই মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা।”