ধানের দাম ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে আবার চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। মান ও জাতভেদে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকরা সরকারকে চাল দেওয়ার কারণে খুচরা বাজারে চালের সরবরাহ কমেছে এবং বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ধান–চাল মজুত করার কারণে ধাপে ধাপে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষরা বিপাকে পড়েছেন।
শুক্রবার (২৭ জুন) রাজধানীর নিউ মার্কেট ও কারওয়ান বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন বাজারে মানভেদে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়। ঈদের আগে একই চাল বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায়। সে হিসাবে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধানের চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। সে হিসাবে এসব জাতের চালের দাম বেড়েছে দুই টাকা। এখন নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা, কাটারিভোগ ৭২ থেকে ৭৬ টাকা, স্বর্ণা গুটি চাল ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা এবং চিনিগুঁড়া পোলাও চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে।
কমেছে ডিম, মুরগির ও মাছের দাম বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ ভালো থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে ডিম, মুরগি ও মাছের দাম সামান্য কমেছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগির এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এখন বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
বাজারে এখন এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৮০ থেকে থেকে ৩০০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, দেশি শিং ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিশীল সবজির বাজার এখন বাজারে বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, দেশি শশা ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, প্রতিটি পিস লাউ ৫০ টাকা ও জালি কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১৮০ টাকা এবং দেশি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর নিউ মার্কেটে চাল কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী তামিম হায়দার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, এখন বোরো ধানের ভরা মৌসুম চলছে। এরপরও ধাপে ধাপে বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এখন চাল কেনা বেশ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি কারণে আমরা চিন্তিত। কারণ, বাজারের সবকিছু দাম বাড়লেও আমাদের শ্রমের দাম বাড়ে না। বড় বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে কঠোর হস্তক্ষেপ করা।
নিউ মার্কেটর আহমেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শামীম আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। মিল মালিকরা এখন বাজারে চাল কম ছাড়ছে। এছাড়া, চালের পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাই, চালের দাম বাড়তে শুরু করছে। তবে, দেশের বাজারে চালের কোনো সংকট নেই।