জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধ্যয়নরত এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হেনস্তার ঘটনা ঘটলে তাকে আটক করা হয়।
জানা গেছে, পূর্বপরিচিত জাবির অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম আবর্তনের এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা। পরে সেই নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করে কথপোকথনকালে জোরপূর্বক হাত ধরার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে ওই ছাত্রী প্রক্টর বরাবর হেনস্তার অভিযোগ দেন।
অভিযুক্ত সোহেল রানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তার বাসা সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানায়। বর্তমানে চাকরি খুজতে ঢাকার লালবাগে অবস্থান করছেন। তার পিতার নাম মো. হানিফ মোড়ল।
অভিযোগকারী অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম আবর্তনের ওই ছাত্রী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সোহেল রানা আমাকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নানাভাবে হেনস্তা করে আসছে। তার সঙ্গে আমি যোগাযোগ না রাখতে চাইলেও নানাভাবে আমাকে ব্লাকমেইল করে যোগাযোগ রাখতে বাধ্য করেছে। ইতোপূর্বে তিনি গুণ্ডা ভাড়া করে আমার বাবাকে মারধর পর্যন্ত করেছে। গত কয়েকমাস যাবত তার হেনস্তার মাত্রা আমার সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে।”
তিনি বলেন, “আজ তিনি আমার ক্যাম্পাসে এসে আমাকে জোরপূর্বক একা দেখা করতে বাধ্য করেছে এবং সঙ্গে কাউকে নিয়ে গেলে মারধরের হুমকি দিয়েছে। দেখা না করলে ‘দেখে নিব’ বলেও হুমকি দিয়েছে। পরবর্তীতে চাপে পড়ে আমি একা দেখা করি এবং কথোপকথন চলাকালে দূর থেকে আমাদের দেখে আমার বন্ধুরা। তখন তিনি তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং ‘ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে দেখে নেব’ বলে হুমকি দেন।”
তিনি আরো বলেন, “এমন্তাবস্থায় আমি এবং আমার পরিবার কেউ নিরাপদ মনে করছি না। তাই আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছি যেন তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং আমাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেন।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অর্থনীতি বিভাগের ৫২ তম আবর্তনের ফাররাজ আহমেদ বলেন, “আমাদের বান্ধবীর সঙ্গে ওই ছেলেটি খারাপ আচরণ করলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সেখানে যাই। পরে ওই ছেলে আমাদের ভয় দেখান এবং হুমকি দিয়ে বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে তিনি আমাদের মারবেন।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম আবর্তনের কাজী নাহিদা আক্তার প্রমা বলেন, “আমার বান্ধবীকে ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরে হেনস্তা করে আসছে। সে ভয়ে কিছু বলতে পারে না। আজ ছেলেটি ক্যাম্পাসে আসে এবং জোরপূর্বক দেখা করে হেনস্তা করে। আমরা এই ঘটনার কঠিন থেকে কঠিনতম বিচার দাবি করছি এবং সেইসঙ্গে আমার বান্ধবী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানাচ্ছি।”
তবে অভিযুক্ত রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, “আমি আজ তার সঙ্গে দেখা করতে আসি। আমরা পূর্ব পরিচিত ছিলাম এবং আগে একই জায়গায় থাকতাম। আমাদের ফেসবুকে কথা হয়। আজ আসার সময় আমি তাকে জানাই দেখা করার জন্য।”
একা দেখা করার জন্য হুমকি দিয়েছিলেন কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি এ রকম কথা বলেছি। আমি এটা এমনিই বলেছিলাম তখন। কিন্তু তার বন্ধুরা এর জন্য এখন অভিযোগ করছে।”
আজকের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আজ আমি সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসে আসি এবং এখানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আমার কিছু বন্ধুর সঙ্গে দেখা করি। পরে আমি ওই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাই। শহীদ মিনারে দেখা করি এবং এক পর্যায়ে তার বন্ধুরা এসে সেখান থেকে আমাকে হেনস্তা করার অভিযোগে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে।”
এ নিয়ে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে আমাদের শিক্ষার্থীর থেকে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছি। আমরা ছেলেটিকে আটক করেছি এবং প্রক্টর স্যার আসলে আমরা অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত উভয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশেদুল আলম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমি একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। বিস্তারিত পরে জানাতে পারব।