ক্যাম্পাস

মুরাদনগরে নারী ধর্ষণ: জবি ও কুবি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু নারী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (২৯ জুন) পৃথক কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থীরা এ প্রতিবাদ জানান।

এদিন দুপুরে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফোরাম’ এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ভাস্কর্য চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার সেখানে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জবি শাখার সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, “প্রতিদিন ধর্ষণের খবর দেখে আমরা যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। অথচ এই অভ্যস্ততার মধ্যেও নিরাপত্তাহীনতা বেড়েই চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কিন্তু তারা ব্যর্থ। মুরাদনগরের ধর্ষিতার চাচার ‘কাল আমার ঘরেও এমন হতে পারে’ এই কথাটাই আমাদের সবাইকে নাড়া দেয়।”

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী অরুণাভ আশরাফ বলেন, “ধর্ষণের পর ভিকটিম ব্লেমিং, স্লাট শেমিংয়ের মাধ্যমে অপরাধকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার। যতদিন সমাজ কাঠামোর এই পচন বদলাবে না, ততদিন নারীর নিরাপত্তা আসবে না।”

অন্যদিকে, বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ধর্ষকের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আছিয়া থেকে নন্দিনী, বিচার হতে দেখিনি’, ‘এক দফা এক দাবি, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, ধর্ষকের বিচার চাই’, ‘আমার বোন ধর্ষিতা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘তুমি কে আমি কে, ধর্ষিতা ধর্ষিতা’ ইত্যাদি স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অন্তু দাশ বলেন, “ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমাদের ফোকাসটা এমন যে, যখন ধর্ষণ হয়, তখন আমরা ধর্ষককে দলীয় প্রেক্ষাপটে চিন্তা করে  থাকি। আওয়ামী লীগ বলে, এটা বিএনপির লোক, ছাত্রদলের লোক। আবার অন্য কেউ বলে, এটা ছাত্রলীগের লোক, এটা জামাত-শিবিরের লোক। ধর্ষক যেই হোক না কেন, তার সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিকভাবে সেটার মোড় পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয় এবং কোনো একটা দল তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। আমরা চাইব, ধর্ষক যে দলেরই হোক না কেন, তার সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা হউক।”

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী অজয় বর্মণ বলেন, “কুমিল্লায় যে ধর্ষণ ঘটনা হয়েছে এবং বগুড়ায় যে ধর্ষণ করা হয়েছে, সেই ঘটনা এবং সারা বাংলাদেশে চলমান ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমরা এ মানববন্ধন করেছি। কুমিল্লায় যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা হয়েছে, তা ভিডিও করে ভাইরাল করা হয়েছে। এখানে যে ফজর আলীসহ যারা ভিডিও ভাইরাল করেছে, তাদের যথাযথ এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা দেখেছি বরিশালেও একইভাবে ঘটনা ঘটেছে। যেখানে সম্মানহানি করে, রেপ করে, তাকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে চলমান সব ঘটনার আমরা শাস্তি চাই এবং সবাইকে আহ্বান জানাই, যে সবাই আওয়াজ তুলুন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলুন।”

শনিবার (২৮ জুন) রাতে ভুক্তভোগী নারীকে বিবস্ত্র করে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় পর মুরাদনগর থানায় জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী। এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্তসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।