ব্রাজিলের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি হয়ে আছে এক কলঙ্কময় দিন। সেদিনের দাঙ্গা শুধু রক্ত আর ধ্বংস বয়ে আনেনি, বয়ে এনেছিল এক টুকরো শৈশব স্মৃতিও। যা ছিল নেইমারের স্বাক্ষর করা একটি ফুটবল।
এই বলটি ছিল কেবল একখণ্ড চামড়ার গোল বস্তু নয়; তা ছিল সান্তোস ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের প্রতীক, যেটা নেইমার নিজ হাতে স্বাক্ষর করে তা উপহার দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য মার্কো মাইয়াকে, ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল। বলটি পরে জায়গা করে নেয় ব্রাজিলের জাতীয় কংগ্রেস ভবনের জাদুঘরে স্মারক হিসেবে।
কিন্তু ইতিহাস কখনও শুধু স্মৃতি নয়, তা মাঝে মাঝে দুঃখও হয়ে ওঠে। ২০২৩ সালের সেই দাঙ্গার সময়, যেখানে হাজারো বলসোনারো সমর্থক ক্ষোভ উগরে দেন রাষ্ট্রীয় ভবনগুলোতে। সেখানে এক ফুটবল-ভক্তের আবেগও যেন সীমা ছাড়িয়ে যায়। ৩৪ বছর বয়সী নেলসন রিবেইরো ফন্সেকা জুনিয়র এক ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার, বলটি খুঁজে পান কংগ্রেস ভবনের ধ্বংসাবশেষে। তার দাবি অবশ্য এমনটাই।
তার হাতে সেই ঐতিহাসিক বল পৌঁছানোর ২০ দিন পর সোরোকাবার এক বলসোনারো সমর্থকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় সেটি। তদন্তে উঠে আসে, শুধু বলই নয় রিবেইরোর বিরুদ্ধে ছিল আরও অনেক রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ।
শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম ফেডারেল কোর্টের রায়ে তার কপালে জোটে ১৫ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড। সঙ্গে আরও দেড় বছর ডিটেনশন। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাকে জরিমানাও গুনতে হবে প্রায় ৬৬ হাজার ব্রাজিলিয়ান রিয়াল। যা প্রতিদিন তার আয়ের এক তৃতীয়াংশ হারে গণনা হবে ১৩০ দিন ধরে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, নেইমারের একটি সই করা বল যা হয়তো একসময় নেলসনের মতো একজন ফুটবলপ্রেমীর চোখে ছিল ‘ভক্তির স্মারক’, সেটিই এখন তার ১৭ বছরের একাকী শাস্তির কারণ। স্মৃতির বল এখন পরিণত হয়েছে নিয়তির শৃঙ্খলে।
তবে শুধু নেলসন একা নন। সেই সহিংস ঘটনার জেরে দেশজুড়ে অভিযুক্ত হন আরও ৫০০ জনের বেশি। জাতীয় সম্পদের ক্ষতির দায়ে তাদের কাছ থেকেও প্রায় ৩০ মিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান রিয়াল ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক আলেক্সান্দ্রে ডি মোরায়েস।
এদিকে, নেলসনের শাস্তির মেয়াদ নিয়ে বিভক্ত মত রয়েছে দেশটির উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রীদের মাঝে। কেউ ১৫ বছরের সাজাকেই যথাযথ বলে মেনে নিলেও, কেউ কেউ তা খাটো করার পক্ষে। লুইজ ফাক্স নামের এক মন্ত্রী তো বলেই বসেছেন, সম্পদ ক্ষতিসাধনের অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক!
একটি ফুটবল, একখণ্ড সই, একখানা দাঙ্গা আর এক ভক্তের ভেঙে যাওয়া ভবিষ্যৎ। এই সবকিছু মিলে তৈরি হয়েছে এমন এক অধ্যায়, যা ফুটবলের বইয়ে নয়, বরং ন্যায়বিচারের পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।