সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ জানিয়েছেন, নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কুইক রেসপন্স টিম মাঠে নামছে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা দিয়ে কুইক রেসপন্স টিমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন। ভবিষ্যতে দেশের সব উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই টিমের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানীতে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি।
শারমীন মুরশিদ বলেন, “বাংলাদেশে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। শুধু নারীরাই নয়, শিশুরাও ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলে শিশুরাও যৌন সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নারীর নিরাপত্তা ও শিশুদের সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে বিদ্যমান পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে এখনই সময় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার।”
তিনি আরো বলেন, “আমার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি, এ ধরনের নির্যাতন রোধে কোনো কার্যকর কাঠামো নেই। তাই আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে একটি সুসংগঠিত কাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল’-এর অধীনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এবার আমরা ‘কুইক রেসপন্স টিম’ ও ‘কুইক রেসপন্স টাস্কফোর্স’ গঠন করেছি, যারা মাঠপর্যায়ে সরাসরি কাজ করবে।
শারমীন মুরশিদ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “প্রত্যেকটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে কুইক রেসপন্স টিমের কার্যকর উপস্থিতি থাকবে। আমরা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছাতে চাই, যাতে নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুরা দ্রুত সহায়তা পায়।”
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। পরিবার, কর্মক্ষেত্র, পাবলিক স্পেস, এমনকি অনলাইনেও নানা ধরনের সহিংসতা সংঘটিত হচ্ছে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের ১৪ ধারায় এবং হাইকোর্টের নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা আছে ভিকটিমের পরিচয়, ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু অনেক সময় মিডিয়া তা লঙ্ঘন করে। বরং ধর্ষক ও নারী নিপীড়কদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।”
“আপনারা সমাজের বিবেক। তাই আপনাদের আরো জোরালোভাবে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। নারী এবং শিশুদের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা আমি প্রত্যাশা করি,” যুক্ত করেন উপদেষ্টা।
নতুন গঠিত কুইক রেসপন্স টিম ও টাস্কফোর্সের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারীদের নিরাপদ আশ্রয়, চিকিৎসা, আইনি সহায়তা এবং মানসিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা দ্রুত সময়ে নেওয়া হবে।