রাজশাহীতে গোলাগুলির ঘটনার পর যৌথবাহিনীর অভিযানে সাংবাদিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার (২ জুলাই) বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নগরের খুলিপাড়া এলাকায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে এ অভিযান চালায় বোয়ালিয়া থানা-পুলিশ ও সোনবাহিনীর সদস্যরা।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন, খুলিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জুলু (৪৮), তার ছেলে নাজমুল ইসলাম জিম (২৫) এবং একই এলাকার বাসিন্দা মো. মুন্না (২৩)। মুন্না সম্পর্কে নজরুল ইসলামের ভাতিজা। নজরুল ইসলাম রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক নতুন প্রভাত পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি। এছাড়া তিনি খবর২৪ঘণ্টা নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের উপদেষ্টা সম্পাদক। তার ছেলে জিম এই পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক।
গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) দিবাগত রাতে সিয়াম ইসলাম রাজ (১৯) নামে এক তরুণের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, পূর্ব বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য তিনি বিকেলে বাসার রোড মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে বসেছিলেন। সেখানে নাদিম (২৯) নামের এক যুবক তাকে কিলঘুষি মারেন। এছাড়া মো. সাকিব (২৪) নামের আরেক যুবক পিস্তল বের করে দুই রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার করেন। পরে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। গুলি ছোঁড়ার ওই ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘‘এই মামলা হওয়ার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা খুলিপাড়া মহল্লায় নজরুল ইসলাম জুলুর বাড়িতে অভিযান চালায়। বাড়ি থেকে নজরুল ও তার ছেলে জিম এবং একই এলাকা থেকে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজের করা মামলায় তদন্তে প্রাপ্ত আসামি হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’’
এদিকে তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। এতে বলা হয়, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র বহন, ধর্ষণ, জুয়া ও মারামারিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম জুলু এলাকায় অবৈধ প্রভাববিস্তারকারী হিসেবে পরিচিত এবং তার ছত্রছায়ায় একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়ে আসছে। এছাড়াও জুলুর নেতৃত্বে রাজশাহী প্রেস ক্লাব দখলসহ ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।’’
বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘‘নজরুল ইসলাম জুলুসহ তিন আসামিকে মারামারির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে (বৃহস্পতিবার) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জুলুর বিরুদ্ধে আরো ১৩টি মামলা আছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলার কথাও জেনেছি। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি মোহাম্মদপুর থানায় জানানো হয়েছে।’’
আদালতে আসামিদের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে, তবে শুনানি এখনো হয়নি বলেও জানান ওসি।
এদিকে, গ্রেপ্তারের পর নজরুল ইসলাম ও তার ছেলে জিমকে রাজশাহী প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে জুলুর নেতৃত্বে থাকা প্রেস ক্লাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম জুলু ও কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য নাজমুল ইসলাম জিমকে ক্লাবের সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’’