বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এনবিআর নামের প্রতি মানুষের একটি নেগেটিভ ধারণা রয়েছে। তাই এই নামটি আর থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব বাস্তবায়ন নামে দুটো বিভাগ যেটা হয়েছে, এখন থেকে সেটাই থাকবে। দুই বিভাগের জন্য দুজন সচিব থাকবেন।
রবিবার (১৩ জুলাই) সকালে সচিবালয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি দেশের সার্বিক ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প-বাণিজ্যসহ রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি।
ফাওজুল কবির খান বলেন, “এনবিআর সংস্কার নিয়ে যে অধ্যাদেশ করা হয়েছে, সেখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। শব্দ গঠনেও ছিল কিছু ভুল। উপদেষ্টা কমিটি সেগুলো সংশোধনের সুপারিশ করবে।”
এনবিআর কর্মকর্তাদের রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, “এটি নিরীহ আন্দোলন ছিল। পরে এটি সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়। অর্থনৈতিক ক্ষতি করার উদ্দেশ্য হয়ে পড়েছিল। রাজস্ব আদায় বাধাগ্রস্ত করার একটা উদ্দেশ্য ছিল।”
একটা পত্রিকায় প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “সেখানে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথা বলা হয়েছে। সেখানে আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধী অবস্থান তৈরি হয়েছে। সরকার কিন্তু অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা আমাদের বলেছেন, আপনারা এতদিন এটাকে (আন্দোলন) কন্টিনিউ করতে দিলেন কেন? এটা ১৫ দিনের মাথায় কেন থামালেন না? নিপীড়নমূলক না হয়ে কীভাবে এটা সমাধান করা যায় সেজন্য তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বারবার আলোচনা করেছেন। কিন্তু সেটাতে কাজ হয়নি।”
তিনি বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এরইমধ্যে পাঁচটি সভা করেছে। ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন, আয়কর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, এনবিআর, সংস্কার কমিশন এবং সর্বশেষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা মাঠ পর্যায়ে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট কার্যক্রম দেখব।”
উপদেষ্টা জানান, আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের প্রধান বক্তব্য ছিল, এনবিআর অটুট রাখতে হবে। রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বাস্তবায়নের যে দুটি ডিভিশন, সেখানে ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগ করতে হবে। তারা দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। এখন আর দুই বিভাগ করার ক্ষেত্রে তাদের কোনো আপত্তি নেই। সংস্কার কমিটির যে বক্তব্য, সেটিও অভিন্ন।
উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন দুই মাস আন্দোলনের কারণে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা এটাও জানিয়েছেন প্রতিনিয়ত শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের হয়রানির শিকার হন তারা। সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ফাওজুল কবির খান বলেন, “আপনারা জানেন, এনবিআরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। কিছু কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা (ব্যবসায়ীরা) বলেছেন, এটি ঠিকই আছে, তবে এ বিষয়ে একটু ধীরগতি অবলম্বনের জন্য তারা অনুরোধ করেছেন।”
গত ৩০ জুন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল করতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল করতে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক। পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে আরও সদস্য হিসেবে রয়েছেন- নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন।