চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি পৌরসভায় মশক নিধনের জন্য ১৭টি ফগার মেশিনের মধ্যে ১০টিই বিকল হয়ে পড়ে আছে। সচল থাকা বাকি সাতটি ফগারের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ ও রহনপুর পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লায় মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এদিকে নাচোল পৌরসভায় কোন ফগার মেশিন সচল নেই। পৌরবাসীদের অভিযোগ- উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়া ডেঙ্গু পরিস্থিতিতেও তাদের এলাকায় কোন মশক নিধনের কর্মসূচি আশানুরূপভাবে পালন করে না পৌর প্রশাসন। এমন পরিস্থিতে আগামীতে আরও ভয়াবহ হারে বাড়তে পারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বলছেন সচেতন নাগরিকরা। ফগার মেশিনের কাজ হরো তরল পদার্থকে (কীটনাশক-জীবাণুনাশক) অত্যন্ত সূক্ষ্ম কণা বা কুয়াশার (ধোঁয়ার মতো) আকারে বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া। এর মাধ্যমে রোগবাহী মশাসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক পোকা দূর হয়। কিন্তু এই ফগার মেশিনেরই সঙ্কট রয়েছে জেলার চারটি পৌরসভায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় মশক নিধন কর্মসূচির জন্য ১১টি ফগার মেশিনের মধ্যে চারটি সচল থাকলেও বাকি আরও সাতটিই নষ্ট। শিবগঞ্জ পৌরসভার দুটির মধ্যে একটি সচল। নাচোল পৌরসভায় দুটিই ফগার বিকল। অন্যদিকে রহনপুর পৌরসভায় দুটি মেশিন থাকলেও বরাদ্দের অভাবে ঢিমেতালে চলছে মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম।
পৌরবাসীদের অভিযোগ- চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি পৌরসভায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। নেই পর্যাপ্ত ময়ালা ফেলার স্থানও। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকলেও নিয়মিত তা পরিষ্কার করা হয় না। এ কারণে বাড়ছে মশার উপদ্রব। অধিকাংশ ড্রেনে পানি প্রবাহ না থাকায় ড্রেনগুলোতে ময়লা-আবর্জনা জমে রয়েছে।
ড্রেনে জমে থাকা পানি থেকে জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা। দিনে কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে মশার উপদ্রব বাড়তে থাকে। সেসময় মশারি বা কয়েল ছাড়া ঘরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই জেলা হাসপাতালসহ বাকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল রোববারই শুধুমাত্র ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ডেঙ্গু রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- গত একমাসে জেলায় প্রায় আড়াইগুণ পর্যন্ত ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। জেলায় মোট ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪১১ জন। জেলায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেউই মারা যায়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, “এ পৌরসভার আরামবাগ, বালুবাগান, পিটিআই বস্তি, মাদ্রাসাপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া ও মসজিদপাড়া মহল্লাকে ডেঙ্গুর হটস্পট বলা হচ্ছে। এসব এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পাওয়ায় এখন ফগার মেশিন ব্যবহার করছে পৌরসভা। কিন্তু পৌর এলাকার অন্যান্য জায়গায় ফগারের আওয়াজ পাওয়াই যায় না। নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারও করা হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘনবসতি আছে। এখানকার মানুষ জারজীর্ণভাবে বসবাস করে। চলমান ডেঙ্গুর প্রকোপে এসব এলাকায় মশক নিধন না করা হলে আগামীতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।”
শিবগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা মেসবাউল হক সুজন বলেন, “আমাদের পৌরসভায় ড্রেন আছে ঠিকই কিন্তু এর কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। ময়লা-আবর্জনা পড়ে ড্রেনগুলোয় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কিছুদিন পরপর পৌরসভার আশপাশের ড্রেনগুলো নামমাত্র পরিস্কার করা হলেও বাকি এলাকাগুলো অবস্থা আরও খারাপ। ফলে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। এবারের ডেঙ্গু মৌসুমেও ফগার মেশিনের ব্যবহার নেই বললেই চলে।”
নাচোল পৌরসভার বাসিন্দা হাবিবুল্লাহ বলেন, “নতুন করে নাচোলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এখানকার পৌরসভার মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন ভূমিকা নেই। পরে জানতে পেরেছি পৌরসভার দুটি ফগারই বিকল।”
নাচোল পৌরসভার কঞ্জারভেন্সি ইন্সপেক্টর আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের দুটি ফগার থাকলেও কোনটাই এখন কাজ করছে না।” তাহলে মশক নিধন কীভাবে করা হয় এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদুত্তর দেননি।
শিবগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন জানান, “আমাদের পৌরসভার দুটি ফগারই নষ্ট ছিল। কিছুদিন আগে ১২ হাজার টাকা খরচ করে একটি মেরামত করা হয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) থেকে প্রতি ওয়ার্ডে মশক নিধনের কার্যক্রম শুরু করা হবে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন-অর-রশীদ বলেন, “আমাদের পৌরসভায় নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ১১টি ফগার মেশিন রয়েছে। এরমধ্যে চারটি সচল থাকলেও বাকি সাতটি অকেজো। অবশ্য দুটি মেকানিকের কাছে ঠিক করতে দেওয়া আছে। ফগার মেশিন সঙ্কট থাকায় কিছুটা মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ডেঙ্গুর হটস্পট এলাকাগুলোয় ঘনঘন ফগার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বাকি অন্যান্য এলাকাগুলোয় প্রতিমাসে একবার মশার লার্ভা নষ্ট করার জন্য স্প্রে করা হয়।”
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, “পৌরসভার অধিকাংশ ফগার মেশিন নষ্ট এটি খুবই দুঃখজনক। পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বলে দিবো মেশিনগুলো যেন দ্রুতই মেরামত করা হয়।”