সারা বাংলা

আশুলিয়ায় দলিল লেখকদের কর্মবিরতিতে ভোগান্তি

ঢাকার সাভার সেন্ট্রাল মডেল কলেজের নামে ১০ শতাংশ জমি দান করবেন হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি। জমির নিবন্ধনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সপ্তাহখানেক আগে আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যান কলেজের শিক্ষক আলতাব হোসেন। দলিল লেখকেরা তাকে কার্যক্রম বন্ধ বলে জানান।

এ ঘটনায় সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি যেকোনো জায়গা থেকে দলিল লিখে আনতে বলেন। সাভার থেকে দলিল লিখে গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) পুনরায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করেন আলতাব হোসেন।

সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে আলতাব হোসেন বলেন, ‘‘কয়েকজন দলিল লেখকের কারণে অযথাই আমাদের হয়রানি হতে হয়েছে। সাভার থেকে দলিল লিখে নিয়ে যেতে হয়েছে।’’

ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় প্রায় এক মাস ধরে আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। দলিল লেখকদের এ কর্মবিরতির কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছেন জমির নিবন্ধন করতে আসা দাতা-গ্রহীতারা। আন্দোলনকারীদের বাধায় ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।

ভুক্তভোগী ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মবিরতি পালনকারীদের অনেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। জমির নিবন্ধন করতে আসা দাতা-গ্রহীতাদের কার্যক্রম বন্ধ বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা ছাড়া নিজ উদ্যোগে দলিল নিবন্ধনের কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন। জমির নিবন্ধন সম্পন্ন করায় মারধরের শিকার হতে হয়েছে একজনকে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী।

কর্মবিরতি পালনকারীদের দাবি, আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভুইয়ার স্বেচ্ছাচারিতা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও অসম্মান করে কথা বলা এবং দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং পদত্যাগের দাবিতে তারা এ কর্মবিরতি পালন করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানান, এ বছরের ২৩ মার্চ আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভুইয়া যোগ দেন। যোগদানের পর তিনি দলিল নিবন্ধনে জমির শ্রেণি অনুসারে সরকার নির্ধারিত কর আদায় করতে গেলে দলিল লেখকদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে তার মতবিরোধ তৈরি হয়।

দলিল লেখকদের অনেকে জমির নিবন্ধনের সময় সরকার নির্ধারিত উৎস কর কমানোর জন্য দাবি জানান। এছাড়া জমির দলিল সম্পন্ন করার সময় ‘ভুয়া’ ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের রশিদ দিলে সেটিও আটকে দেন সাব-রেজিস্ট্রার। এসব কারণে দলিল লেখকদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। পরে তারা অন্যদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

‘ভুয়া’ ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের একটি রশিদ রাইজিংবিডি. ডটকমের প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। সরকারি রশিদের মতো দেখতে রশিদের কিউআর কোড স্ক্যান করে দেখা যায়, রশিদটি সরকারি ডোমেইনে নয়, সেটি একটি ডট এক্সওয়াইজেড ডোমেইনে তৈরি ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে এই ‘ভুয়া’ খাজনা দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে, সেটি আটকে দিয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার।

এদিকে, গত ২৩ জুন দুপুরে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিলেশনশিপ অফিসার আমির হোসেন ব্যাংকের বন্ধক (মর্টগেজ) দলিল সম্পন্ন করায় দলিল লেখক মোশাররফ, মো. নূর ইসলাম, মো. মোবারক, মো. মনসুর, মো. করিমসহ ১০-১২ জন তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আন্দোলনকারীদের অন্যতম আলমগীর হোসেন বলেন, ‘‘সাব-রেজিস্ট্রার প্রচণ্ড রকমের স্বেচ্ছাচারী, দুর্নীতিগ্রস্ত। আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অসম্মান করে কথা বলেন। এসব কারণে চলতি বছরের ১৭ জুন থেকে সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। জেলা রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন জায়গায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকার নির্ধারিত করের ক্ষেত্রে পূর্বের সাব-রেজিস্ট্রার যেভাবে করেছেন, আমরা সেভাবেই করার কথা বলেছিলাম। যদি আমরা ভুল বলে থাকি, উনি আমাদের বুঝিয়ে দিলেই হতো। তিনি এমন কোনো প্রমাণ কি দিতে পারবেন যেটাতে আমরা কর কমাতে বাধ্য এবং ‘ভুয়া’ খাজনা দিয়ে দলিল করতে বাধ্য করেছি?”

সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভুইয়া বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন। আমি তাদের অনুরোধ করব, একটা প্রমাণ অন্তত তারা যেন দেখায়। অনেকে তাদের ভুল বুঝতে পেরে আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন। দলিল নিবন্ধন করাচ্ছেন। গুটি কয়েকজনের অযৌক্তিক, অন্যায় স্বার্থের জন্য সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সরকারি নিয়মের বাইরে গিয়ে, ‘ভুয়া’ খাজনার রশিদ দিয়ে এই অফিসে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। নিয়মের মধ্যেই সবাইকে চলতে হবে।”