অর্থনীতি

বিডি পেইন্টসের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করবে বিএসইসি

পুঁজিবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিডি পেইন্টস লিমিটেডের কারখানা, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ লক্ষ্যে বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে শর্তসাপেক্ষে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

তদন্তের বিষয়ে বিডি পেইন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল, সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিক এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সিনিয়র এক্সিকিউটিভ গালিব নকিব রহমান।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, বিডি পেইন্টসের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের মাধ্যমে সংগ্রহীত অর্থ কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, তা খাতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি। এছাড়া কোম্পানিটির লেনদেন, নগদ অর্থ, বিনিয়োগগুলোর ন্যায্য মূল্যায়ন ও সহযোগী কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়েছে কি না, তা শনাক্ত করা হবে। একইসঙ্গে পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা অর্থ প্রসপেক্টাসে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হবে। এছাড়া কমিশনের সম্মতিপত্র অনুসারে সময়ে সময়ে সে বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে কি না, তাও আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে বিডি পেইন্টস লিমিটেডের কারখানা, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথি পরিদর্শন করা প্রয়োজন। তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ১৭ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।

নির্দেশনায় কমিশন বলছে, এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কমিশন এতদ্বারা বিএসইসি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের উপরোক্ত বিষয়ে  তদন্ত পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে এবং তদন্ত সংক্রান্ত প্রতিবেদনের দুটি হার্ড কপি এবং একটি সফট কপি কমিশনে জমা দিতে নির্দেম দেওয়া হলো।

পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে বিডি পেইন্টস লিমিটেডের বেশি কিছু বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে- কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের মাধ্যমে কোম্পানি যে অর্থ সংগ্রহ করেছে তা প্রসপেক্টসে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে সেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

লেনদেনগুলো যাচাই করা হবে, লেনদেনের নগদ অর্থ এবং বিনিয়োগগুলোর ন্যায্য মূল্যায়ন করা হবে, সহযোগী কোম্পানির মধ্যে কোনো লেনদেন হয়েছে কি না, তা শনাক্ত করা হবে।

সেইসঙ্গে পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা অর্থ প্রসপেক্টাসে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেভাবে ব্যবহার কেরা হয়েছে কি-না তা যাচাই করা হবে। এছাড়া কমিশনের সম্মতিপত্র অনুসারে সময়ে সময়ে সে বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে কি-না তাও আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করা হবে।

ছোট অর্থের নগদ ব্যয় ব্যতীত সমস্ত লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে কি-না তা যাচাই করা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অবশিষ্ট ব্যালেন্স যাচাই করা হবে।

এছাড়া কমিশনের কিউআইও’র সম্মতিপত্রের শর্ত নং ১৮ অনুসারে পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ অর্থ ব্যয়ের উদ্দেশ্য এবং সময় সংশোধনের জন্য বেশিরভাগ সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মতামত নিয়েছিল কি না, তা যাচাই করা হবে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

রং উৎপাদনকারী কোম্পানি বিডি পেইন্টস লিমিটেডের সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

এদিকে, সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৪৩ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.২২ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭.৯৯ টাকা।

বিডি পেইন্টস লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২২ সালে। ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৬২ কোটি টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি ২০ লাখ।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩০.৪৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৭.৯৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪১.৬৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩৩.৮০ টাকায়।

২০২২ সালের ১২ এপ্রিল বিএসইসির ৮২০তম কমিশন সভায় বিডি পেইন্টসের কিউআইও অনুমোদন দেয় বিএসইসি। কোম্পানিটি কিউআইও’র মাধ্যমে ১২ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ ও স্থাপন, চলতি মূলধন এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনার খরচ খাতে ব্যয় করবে বলে জানায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

ওই বছরের ২২ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত কোম্পানিটির কিউআইওতে আবেদন গ্রহণ করা হয়। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং সিএপিএম অ্যাডভাইজারি লিমিটেড।