গত বছরের ১৮ জুলাই ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন। সেদিন ঢাকা পরিণত হয়েছিল এক উত্তাল জনপদে, ছড়িয়ে পড়েছিল সংঘাত শহরের অলিগলিতে। দিনটি কেড়ে নিয়েছিল দুটি তরুণ তাজা প্রাণ। মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ এবং ফারহান ফাইয়াজের। তাদের আত্মত্যাগের এক বছর পূর্ণ হলো আজ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় উত্তরার আজমপুর এলাকায় ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে পানি বিতরণ করছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। তার হাতে ছিল দেশের প্রতি দায়িত্ববোধের দৃঢ় প্রতিচ্ছবি। মুগ্ধর কণ্ঠ ছিল, "পানি লাগবে কারো, পানি!’ কিন্তু মুহূর্তেই একটি বুলেট তার সব স্বপ্ন, পরিবার এবং ভবিষ্যৎ থামিয়ে দেয়। তার বন্ধুরা বহু সংগ্রাম করেও সময় মতো তাকে হাসপাতালে নিতে পারেননি।
মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “গণহত্যাকারীদের বিচারে সরকার চেষ্টা করছে। দৃশ্যমান বিচার প্রক্রিয়া আমরা আশা করছি। কেননা আমাদের ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে।” মুগ্ধর ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত বলেন, “আমাদের শুধু একটাই কথা ছিল, ন্যায্য বিচারটুকু চাই। সে সময় আমাদের কাছে ব্ল্যাংক চেক আনা হয়েছিল, যা প্রত্যাহার করি।”
একইদিন প্রাণ হারায় ফারহান ফাইয়াজ স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইয়াজকে, স্বপ্ন দেখতেন বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরবেন। তার পড়ার টেবিলে সারি সারি বইতে ধুলো জমে আছে, যা জানান দেয় সেগুলোতে আর কারও হাত পড়ে না। তার স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল।
ঘটনার দিন ১৮ জুলাই দুপুরে ফারহান তার বন্ধুদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। হঠাৎ করেই পুলিশ ও সশস্ত্র ক্যাডারদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝে পড়ে যান তারা। চারপাশে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও গুলির শব্দে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুড়তে শুরু করে এবং এ সময় গুলিবিদ্ধ হন ফাইয়াজ। অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর শুয়ে থাকা ফাইয়াজ শেষবারের মতো বন্ধুর দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করেন চিরতরে।
শহীদ ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “এইচএসসির পর ওমরায় যাবে, এটা তার ইচ্ছে ছিল। তখন ওর খুব ইচ্ছে ছিল দুবাই যাওয়ার। কিন্তু আমি তাকে দুবাই নিয়ে যেতে পারিনি। এই দুঃখ এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, খুব কষ্টও লাগে। নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারি না।”