আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সঙ্গে যারা কাজ করছেন, তাদেরকে নিশানা বানিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন মার্কিন এক ফেডারেল বিচারক।
শনিবার (১৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৬ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে মার্কিন নাগরিক বা ইসরায়েলের মতো মিত্রদের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তে জড়িতদের ওপর ব্যাপক অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেছিলেন।
প্রেসিডেন্টের ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দুই মানবাধিকার আইনজীবী গত ২ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের করার পর, শুক্রবার (১৮ জুলাই) ডিস্ট্রিক্ট বিচারক ন্যান্সি টোরেসেন ট্রাম্পের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে রায় দিয়েছেন।
বিচারক টোরেসেন প্রেসিডেন্টের আদেশকে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, “যে লক্ষ্যে আদেশটি জারি হয়েছে, তা পূরণের তুলনায় এটি বেশি মাত্রায় মতপ্রকাশকে সীমিত করে দেবে বলেই মনে হচ্ছে।”
বিচারক টোরেসেন বলেন, “নির্বাহী আদেশটি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল বা অন্য মার্কিন মিত্রের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকুক বা না থাকুক, কৌঁসুলির সুবিধা হয় এমন বাক-নির্ভর বিভিন্ন সেবাও বিস্তৃত আকারে নিষিদ্ধ করবে।”
ট্রাম্পের আদেশ বাস্তবায়নে বিচারকের স্থগিতাদেশ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হোয়াইট হাউজ বা আইসিসির প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই নির্বাহী আদেশে আইসিসির কৌঁসুলি ব্রিটিশ নাগরিক করিম খানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোলও তাকে নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এই পদক্ষেপের ফলে কোনো মার্কিন নাগরিকের কোনো কাজ যদি করিম খান বা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তির উপকারে আসে তাহলে সেই মার্কিন নাগরিক দেওয়ানি ও ফৌজদারি সাজার মুখোমুখি হবেন, এমনটাই বলা হয়েছে আদেশে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, আইসিসি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে অবৈধ এবং ভিত্তিহীন পদক্ষেপ নিচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে গত বছর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
এটিকে, আইসিসির ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা এটাই প্রথমবার নয়। এর আগে ২০২০ সালেও ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর ‘কথিত’ যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য আইসিসির তৎকালীন প্রধান প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদা ও তার এক সহযোগীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
১২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের স্থায়ী আদালত হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। যা যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বা তাদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অপরাধের জন্য ব্যক্তিদের বিচার করতে পারে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়।