বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার উদ্বোধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বহিরাঙ্গন পরিচালক ড. মো. ফেরদৌস রহমান। এ অনুষ্ঠানে প্রক্টর প্রধান অতিথি ছিলেন।
সিন্ডিকেটে আইন পাস করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতদিন ধরে ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ রেখেছিল। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রক্টরের এ ধরনের আয়োজনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে ১৪তম, ১৫তম ও ১৬তম ব্যাচকে নিয়ে আয়োজিত খেলার ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন, বৈষম্যবিরোধী নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ মুসা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সালেহ মো. আদনান, তাইজুল খান।
তারা অতিথি হিসেবে খেলার মাঠে উপস্থিত থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। পরে খেলা শেষে খেলোয়াড়দের মাঝে পুরস্কার বিতরণও করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, একজন সিন্ডিকেট সদস্য হয়ে যিনি লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, তিনি কিভাবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে খেলা উদ্ভোধন করেন? এটা কি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর মতোই হলো না?
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের খেলায় কিভাবে বহিরাগত ছাত্রনেতাদের এনে পুরস্কার বিতরণ করে, কিভাবে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে একটা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিশেষ অতিথি হয়? ছাত্রদল নেতাদের নিয়ে এমন অনুষ্ঠানের অনুমতি কীভাবে দেওয়া হলো?
এ বিষয়ে বেরোবি শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, “লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকা সত্বেও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে ডেকে আনা ক্যাম্পাসে অপরাজনীতি প্রবেশের প্রয়াস। আর সেখানে রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ থাকা স্বত্বেও প্রক্টরের উপস্থিত থাকাটা বিব্রতকর। প্রশাসনের এ হটকারিতা শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বহিরাঙ্গন পরিচালক অধ্যাপক ফেরদৌস রহমান বলেন, “অফিসিয়ালি আমি অতিথি ছিলাম। উপাচার্য স্যার থাকার কথা ছিল, কিন্তু তিনি দাপ্তরিক কাজে বাইরে ছিলেন। ওরা খেলা দেখতে এসেছিল, এজন্য ছিল।”
রাজনীতি নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে খেলা উদ্ভোধন করতে পারে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “খেলা পরিচালনার দায়িত্বে যারা ছিল, তাদের জিজ্ঞেস করলে ওরা ভালো বলতে পারবে। আর তারা আমার অনুমতি নিয়ে এটা করেনি।” ‘কনফারেন্সে আছি পরে ফোন দেব’- বলেই ফোন কেটে দেন প্রক্টর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড মো শওকত আলী বলেন, “আমি এ বিষয়ে জানি না। তারা (১৪ব্যাচ) আমদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা যদি আয়োজন করে, আমাদেরকে তাদের অনুমতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিতে হয়।”
রাজনৈতিক নেতাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “ছাত্রদেরও তো কিছু দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হয়। তাছাড়াও শিক্ষার্থীরা যখন অনুমতি নেয়, তখন কি বলছে অমুক অমুক আসবে।”