প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৩ দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ ক্রয় বিভাগ গঠন করতে পারেনি গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। ফলে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নানা প্রশাসনিক বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সময়মতো সরঞ্জাম সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা, স্বচ্ছতার অভাব এবং অপ্রয়োজনীয় জটিলতা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশেও প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের শিক্ষকদের অভিযোগ জানান, বিভাগীয় চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, শিক্ষা সরঞ্জাম কিংবা অফিস সামগ্রী সংগ্রহের জন্য তাদের বারবার প্রশাসনিক দপ্তরে যেতে হচ্ছে। দরপত্র সংগ্রহ, তুলনামূলক বিবরণী প্রস্তুত, অনুমোদন সংগ্রহসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া নিজেরা সামলাতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে সময় দিতে পারছেন না তারা। অনেক ক্ষেত্রে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও প্রয়োজনীয় সামগ্রী হাতে পাচ্ছেন না।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনন্ত কুমার দাস বলেন, “এ বছর আমাকে বিভাগের ক্রয় কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে ক্লাস, গবেষণা ও প্রশাসনিক কাজ মিলিয়ে সময় দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কেবল চাহিদা দেয়, সেখানে আমাদেরই দরপত্র থেকে শুরু করে কার্যাদেশ পর্যন্ত সম্পন্ন করতে হচ্ছে।”
রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সভাপতি ড. মো. আলী আজম খান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ীই বেশিরভাগ কেনাকাটা সম্পন্ন হয়। তবে বড় অনুষদগুলোর নিয়মিত চাহিদা থাকায় তারা প্রায় সারা বছরই সরঞ্জাম সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে, যা শিক্ষকদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একাধিকবার প্রকিউরমেন্ট বিভাগ গঠনের প্রস্তাব উঠলেও বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু অভ্যন্তরীণ স্বার্থ এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করেছে। তবে এখন নতুন করে বিভাগটি চালু করার পরিকল্পনা চলছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকিউরমেন্ট বিভাগ একটি প্রতিষ্ঠানের অপরিহার্য অংশ। এটি চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবা সংগ্রহ, বাজেট নিরীক্ষা, গুণগত মান যাচাই এবং সাশ্রয়ী ব্যয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করে। নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট, ড্যাফোডিল, ইউআইইউসহ দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রকিউরমেন্ট বিভাগ গঠন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক দক্ষতা ও স্বচ্ছতা অপরিহার্য। শিক্ষকরা যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে একাডেমিক ও গবেষণা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন। সেজন্য একটি স্বতন্ত্র ও পেশাদার প্রকিউরমেন্ট বিভাগ গঠন এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রকিউরমেন্ট বিভাগ চালুর উদ্দেশ্যে একজন কর্মকর্তা নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “যেসব শিক্ষকদের এসব কাজে নিযুক্ত করা হয়, তারা প্রকৃতপক্ষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। ফলে প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়, ভুল সিদ্ধান্তের আশঙ্কা বাড়ে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন হয় না। এতে শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া গবেষণা ও একাডেমিক কাজে ব্যাঘাত তো আছেই। শিক্ষকদের দিয়ে এসব করানো মানে গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সময় কেটে প্রশাসনিক কাজে ব্যয় করানো।”
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “শিক্ষকদের ভোগান্তির বিষয়টি আমরা জানি। শিক্ষকরা বিভাগের চাহিদা সবচেয়ে ভালো বোঝেন, তাই তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছি এবং প্রকিউরমেন্ট বিভাগ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।”