এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও সুনামগঞ্জ পৌর শহরে স্বপরিবারে ভাড়াটিয়াকে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখেন বাড়ির মালিক।
শনিবার ( ১৯ জুলাই ) দুপুরে পৌর শহরের বড়পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে অবরুদ্ধ থাকার কয়েক ঘণ্টা পর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে শিশুসহ ভাড়াটিয়াদের উদ্ধার করেন সদর থানার টহলরত পুলিশ। বাড়ি মালিকের এমন আচরণে ক্ষোভ জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। দুই ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে গত ৭ মাস ধরে পৌর শহরের পশ্চিম তেঘরিয়া (বড়পাড়া) এলাকায় মাসিক পাঁচ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছেন।
বাসা ভাড়া নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত বাসাভাড়া পরিশোধ করলেও আর্থিক সংকটের কারণে গত জুন মাসের বাসা পরিশোধ করতে পারেননি তিনি। সময় মতো বাসা ভাড়া না দেওয়ায় তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন বাসার মালিক মতিউর রহমান।
ইকবাল হোসেনের স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে ঘরে আটক রেখে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে যান বাড়ির মালিক মতিউর। নিরুপায় হয়ে উদ্ধারের জন্য ৯৯৯-এ ফোন করেন ইকবাল। ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিশুসহ ভাড়াটিয়াদের উদ্ধার করেন পুলিশের একটি টহলদল।
ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া ইকবাল হোসেন বলেন, “গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে বাসা ভাড়া নিয়ে রয়েছি। কখনো বাসাভাড়া বাকি রাখিনি। কিছুদিন যাবৎ সমস্যায় রয়েছি। তাই গেল মাসের ভাড়া দিতে দেরি হয়েছে। বাসার মালিক টাকার জন্য প্রতিদিন খারাপ ব্যবহার করেন। টাকা দিতে কয়েকটা দিন সময় লাগবে জানালে তিনি আমাদের ঘরে আটকে রেখে দরজায় তালা লাগিয়ে দেন।”
তিনি আরো বলেন, “ঘরে আমার ৬ মাসের শিশু সন্তান। আরও তিনটি সন্তান রয়েছে। তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘরে আটকা ছিলাম। বাধ্য হয়ে ৯৯৯-এ ফোন করি। পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করেছে। আমি গরিব মানুষ হতে পারি কিন্তু কারো হক মেরে খাব না। বাসার মালিক যে আচরণ করলেন, তাতে খুব কষ্ট পেয়েছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ছোট ছোট শিশু সন্তানসহ ভাড়াটিয়াদের তালাবন্ধ করে রাখা চরম অমানবিক। আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা আর ঘটেনি।”
ভাড়াটিয়াদের সাথে বাসার মালিকরা যেন ভবিষ্যতে এমন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড না করতে পারেন এর জন্য অভিযুক্ত বাসা মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে রাব্বি নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, “এটি চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন। বাড়ি মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
এদিকে নিজের অপরাধ স্বীকার করে বাসার মালিক মতিউর রহমান বলেন, “আমি না বুঝে এমটা করেছি। তবে ভাড়াটিয়াও আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন।”
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এ এসআই গিয়াস উদ্দিন বলেন, “৯৯৯- এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ভাড়াটিয়াদের উদ্ধার করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত বাসার মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে জড়িত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে।