সারা বাংলা

৪৩ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন শ্রীপুরের ইউপি সদস্য

গাজীপুরের শ্রীপুরে ৪৩ বছর বয়সে এসএসসি পাস করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইয়ার মাহমুদ। পরিবার চালাতে পড়াশোনার মাঝপথে থেমে গিয়েছিলেন তিনি। এবার বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি দেখিয়েছেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই।

উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা এবং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ইয়ার মাহমুদ এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেডে পাস করেছেন। সোমবার (২১ জুলাই) প্রকাশিত ফলাফলে তার এ সাফল্য নিশ্চিত হয়।

পারিবারিক অভাব-অনটনে অষ্টম শ্রেণিতে থেমে যায় তার পড়াশোনা। কৃষক বাবার অসুস্থতা ও সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে কাঁধে। জীবন কাটে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মতোই। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কখনো হারাননি। মেয়েকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ানো সেই বাবা অবশেষে নিজেও ফিরে যান স্কুলে।

২০২৩ সালে তিনি ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। সহপাঠীদের কৌতুক, হাসাহাসি উপেক্ষা করে নিয়মিত ক্লাস করেন, পড়েন এবং প্রস্তুতি নেন পরীক্ষার জন্য।

ইয়ার মাহমুদের একমাত্র মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফা খাতুন বলেন, “বাবা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন, কিন্তু দারিদ্র্য তাকে থামিয়ে দেয়। সেই বাবাই আজ আবার ছাত্র হয়ে এসএসসি পাশ করেছেন; আমরা খুবই গর্বিত।”

এ অর্জনে আনন্দিত ইয়ার মাহমুদের পরিবার ও আশপাশের প্রতিবেশীরাও। তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার। আজ জীবনের এই পর্যায়ে এসে আবার সেই পথেই হাঁটছি। এখন মনে হচ্ছে, চেষ্টা করলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।”

তিনি আরো বলেন, “আমার স্ত্রী, মেয়ে, শিক্ষকরা সবসময় সাহস ও ভরসা জুগিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এটা সম্ভব হতো না। এখন চাই, পড়াশোনাটা আরো সামনে নিয়ে যেতে।”

শুধু পাস করাই নয়, তার দৃষ্টিভঙ্গিও অনন্য। ইয়ার মাহমুদের কথায়, “চাকরি বা রাজনীতি—যে ক্ষেত্রেই থাকি না কেন, পড়াশোনার বিকল্প নেই। এমনকি কৃষি কাজেও শিক্ষার প্রয়োজন আছে।”

শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “ইয়ার মাহমুদের মতো মানুষরা সমাজে বড় ধরনের বার্তা দেয়। শিক্ষা যে বয়সের বাঁধা মানে না, তার জীবনের গল্পই তার প্রমাণ।”