রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীসহ নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
দুপুরে যোহর নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
এ হৃদয়বিদারক ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
এদিকে, নিহত শিক্ষার্থীদের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রাবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)
বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল আয়োজন করেছে জবি মসজিদ কমিটি ও শিক্ষক সমিতি। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. কে এ এম রিফাত, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ড. রইছ উদ্দিনসহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত নামাজ কক্ষে পৃথকভাবে দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন জবির নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
বিকেল সাড়ে ৫টায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ইবির বটতলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব আশরাফ উদ্দীন খানের ইমামতিতে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন ড. আ.ব.ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি নাছির উদ্দিন মিঝি, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বাদ যোহর নিহতদের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ শাহীনুজ্জামান, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দোয়া পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম আশরাফ উদ্দীন খান।
এদিকে, রাষ্ট্রীয় শোকের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)
বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে যবিপ্রবিতে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করার পাশাপাশি জাতীয় পতাকা অর্ধণমিত রাখা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিহতদের মাগফিরাত কামনায় ও আহতদের সুস্থতার জন্য দোয়া ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
দোয়া ও মাহফিলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
মঙ্গলবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। জানাজা নামাজ পড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাতুল ইসলাম।
এছাড়া, রাষ্ট্রিয় শোক পালনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার কুবিতে সব ধরনের ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
বাদ মাগরিব বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে জাবি শাখা ছাত্রশিবির। এ অনুষ্ঠানে শাখা ছাত্রশিবিরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)
সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উদ্যোগে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত সকলের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন এবং পদযাত্রা করেছেন বেরোবি শিক্ষার্থীরা। এ সময় শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় ১ মিনিট নিরবতাও পালন করেন তারা।
সরকারি তিতুমীর কলেজ
বাদ যোহর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটা মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে গভীর শোক প্রকাশ করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে কলেজ প্রশাসন।
এতে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দিন আহমদসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
বাদ জোহর আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নামাজের ঘরে দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিকসের ডিন মো. মাহবুব আলম, কন্ট্রোলার অব এক্সামিনিশন্স ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ.এইচ.এম. আবু সায়ীদ, আইন বিভাগের প্রধান আব্দুল্লাহ হিল গণি, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্সের পরিচালক ফরিদ আহমেদ এফসিএ, ছাত্রবিষয়ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবদুল মতিন, সিএসই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আনিস উদ্দৌলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফটি-৭বিজিআই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পাইলটসহ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হতাহত হন।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে এবং সরকার জাতীয় শোক ঘোষণা করে।