অভিনেত্রী শিখা মৌ, টেলিভিশনের পর্দায় নিয়মিত মুখ। অভিনয়ের মধ্যে দিয়েই কেটে গেছে জীবনের একটা বড় সময়। সংসার, সন্তান আর ক্যামেরার সামনে-পর্দার পেছনের সংগ্রাম, সবকিছু মিলিয়ে যেন এক জীবন্ত উপন্যাস তার জীবন।
মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই বিয়ে হয়েছিল শিখার। স্বামীকে হারিয়েছেন বহু আগে, প্রায় ২৬ বছর হয়ে গেল। তখন অনার্সে পড়তেন। তিন সন্তানের মা; দুই ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেরা বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। এখন মেয়েকে নিয়েই তার দিন কাটে।
শুধু সংসার নয়, নিজের স্বপ্নকেও আগলে রেখেছেন শিখা মৌ। অভিনয়কে ভালোবেসে নাগরিক নাট্যাঙ্গনে থিয়েটার দিয়ে শুরু করেছিলেন যাত্রা। টেলিভিশন নাটক থেকে সিনেমা—সবখানেই কাজ করেছেন নিষ্ঠা আর শ্রম দিয়ে। তবু আজো তাকে ৩ হাজার, ৫ হাজার টাকার জন্য দরকষাকষি করতে হয়!
শিখা মৌ বলেন, “৫ হাজার টাকা চাইলে অনেকে ভাবেন অনেক চেয়ে ফেলেছি। অথচ নতুনরাও কত টাকা নিচ্ছে! আমি তো চাইলেই চাইতে পারি, ২৫ বছর তো হয়ে গেল। কিন্তু ভাবি, সবাই যাতে আমার সঙ্গে কাজ করতে পারে—এজন্য রেমুনারেশন বাড়াই না।”
চোখে জল এনে দেওয়া কণ্ঠে বলেন, “কেউ অসুবিধার কথা বললে বলি—ঠিক আছে বাবা, যা পারো দিও। আমি তো এখন একা। আমার ইনকাম বলতে অভিনয়টাই।”
তবে হাল সময়ে কাজ একেবারে কমে গেছে। গত আড়াই মাসে মাত্র তিন-চারটি কল পেয়েছেন। তার ওপর আবার পারিশ্রমিক নিয়ে সমস্যা লেগেই আছে। তবু থেমে থাকেননি তিনি। বেঁচে থাকার জন্য শিখা লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন নীরবে।
মায়ের সহযোগিতায় পড়াশোনা, থিয়েটার আর টিউশনি করেছেন একসঙ্গে। পাশাপাশি শাড়ি ডিজাইন করে সেল করেছেন, বুটিকের কাজ করেছেন। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়েও কাউকে কষ্ট দেননি, নিজের অভাবের কথা বলে সাহায্য চাননি। শিল্পী সমিতি থেকেও কখনো কোনো সহযোগিতা নেননি এই অভিজ্ঞ অভিনেত্রী।
তার ভাষায়, “আমি সিঙ্গেল মাদার; ডিভোর্সি না, বিধবা। কেউ কি ভাবেন, একজন সিঙ্গেল মা কত টাকা ইনকাম করতে পারে?”
শিখা মৌ অভিনীত সিনেমার তালিকাও ছোট নয়। ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘ছায়াবৃক্ষ’, ‘লকডাউনের ভালোবাসা’, ‘মন বোঝে না’, ‘সোলমেড’, ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ শিরোনামের সিনেমায় তাকে দেখা গেছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘জমজ ভূতের গল্প’।