জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, “দলগুলোর মতামত ও সংশোধনী জানাতে ৩০ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, কেউ যদি কোনো সুপারিশ বা সংশোধনের কথা বলতে চায়, তা যেন ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে জানায়।”
তিনি বলেন, “বিএনপি–জামায়াত জোট ২০১১ সালে বাতিল হওয়া সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল চায়। অর্থাৎ, তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।”
সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংলাপ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এ সংলাপে অংশ নেন। জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত ‘জুলাই সনদ’ এর খসড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, “আলোচনায় যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলোই চূড়ান্ত সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে। এরপর তা বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়সীমা থাকবে ২ বছর।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপি–জামায়াত জোট ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহালের পক্ষে। তাদের মতে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তখনই সম্ভব, যখন প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।”
২০১১ সালে এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকেই তা রাজনৈতিক অস্থিরতার অন্যতম কারণ হয়ে আছে।
এদিকে, এ বৈঠক চলাকালে হঠাৎ দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বেজে ওঠে ফায়ার অ্যালার্ম। এতে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিনিধি দলগুলো কিছু সময়ের জন্য আতঙ্কিত হয়ে ভবনের নিচতলায় নেমে আসেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম হঠাৎ সক্রিয় হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কর্মীরা পরিদর্শন করে নিশ্চিত হন, কোথাও ধোঁয়া বা আগুনের অস্তিত্ব নেই। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির পরিচালককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধি রয়েছেন। তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
‘জুলাই সনদ’ হচ্ছে একটি প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দলিল, যার মাধ্যমে নির্বাচন পদ্ধতি, সাংবিধানিক সংস্কার, মানবাধিকার ও প্রতিষ্ঠানগত জবাবদিহিতার নীতিমালা নির্ধারণ করা হবে। এটি সরকারের নয়, বরং জাতিগত ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের এক রূপরেখা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি দলীয় নয়, জাতীয় দলিল। জনগণের মতামত ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এটি চূড়ান্ত করা হবে।