আন্তর্জাতিক

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে গৃহহীনদের ‘অবিলম্বে’ সরে যেতে বললেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে গৃহহীনদের ‘অবিলম্বে’ সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে শহরের অপরাধ দমন করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

সোমবার (১১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

রবিবার (১০ আগস্ট) নিজস্ব সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা আপনাদের (গৃহহীনদের) থাকার ব্যবস্থা করব, তবে রাজধানী থেকে অনেক দূরে। অপরাধীদের সরতে হবে না-তাদের আমরা জেলে পাঠাবো।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা আমাদের রাজধানী ফেরত চাই। এখানে (অপরাধীদের জন্য) কোনো ‘ভদ্রলোকি আচরণ’ হবে না।”

ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, সোমবার তিনি হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াশিংটন ডিসিকে ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে নিরাপদ ও সুন্দর’ করার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। যদিও তার পরিকল্পনার বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।

২০২২ সালে তিনি শহরের বাইরে কম খরচের জমিতে ‘উচ্চমানের’ তাঁবুতে গৃহহীনদের রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেখানে শৌচাগার ও চিকিৎসা সেবার সুযোগ থাকবে।

ট্রাম্প গত মাসে গৃহহীনদের গ্রেপ্তার সহজ করার জন্য একটি আদেশে স্বাক্ষর করেন এবং তিনি গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন। শুক্রবার তিনি ইউএস পার্ক পুলিশ, ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ), এফবিআই ও ইউএস মার্শাল সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার এজেন্টদের পাঠান।

১৯ বছর বয়সী সাবেক সরকারি কর্মচারীর ওপর কথিত গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও হামলার ঘটনার পর এই পদক্ষেপটি সামনে এসেছে। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় রক্তাক্ত ভুক্তভোগীর ছবি পোস্ট করে ঘটনাটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে, ওয়াশিংটন ডিসির ডেমোক্র্যাট মেয়র মুরিয়েল বাউজার রাজধানীকে ‘বাগদাদ’-এর সঙ্গে তুলনা করায় হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীকে বাগদাদের চেয়েও বেশি সহিংসা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা রাজধানীতে অপরাধের বৃদ্ধি অনুভব করছি না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সঙ্গে যেকোনো তুলনা অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা।”

বাউজার এমএসএনবিসিকে বলেন, “২০২৩ সালে অপরাধের হার বেড়েছিল, কিন্তু এটা এখন ২০২৩ নয়। গত দুই বছরে আমরা সহিংস অপরাধকে ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।”

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অন্যান্য মার্কিন শহরের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি, এই বছর এ পর্যন্ত মোট ৯৮টি হত্যাকাণ্ড রেকর্ড করা হয়েছে। এক দশক আগের তুলনায় মার্কিন রাজধানীতে হত্যাকাণ্ডের প্রবণতা বেশি।

কিন্তু জানুয়ারির ফেডারেল তথ্য থেকে জানা যায়, গত বছর ওয়াশিংটন ডিসিতে সামগ্রিক সহিংস অপরাধের হার গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দেখা গেছে। 

ট্রাম্প সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে শহরে “অপরাধ, হত্যা ও মৃত্যু” বন্ধের পাশাপাশি এর ‘শারীরিক পুনর্নির্মাণ’ বিষয়ে পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি মেয়র বাউজারকে ‘ভালো মানুষ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তার চেষ্টা সত্ত্বেও অপরাধ বেড়েছে এবং শহর আরো ‘নোংরা ও কম আকর্ষণীয়’ হয়ে পড়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসির জনসংখ্যা প্রায় ৭ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৭৮২ জন গৃহহীন। তাদের অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্র বা সরকারি বাসস্থানে থাকলেও প্রায় ৮০০ জন রাস্তায় বসবাস করে বলে জানিয়েছে কমিউনিটি পার্টনারশিপ নামের একটি সংস্থা।

ওয়াশিংটন ডিসি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাজ্য নয়, বরং একটি ফেডারেল জেলা। যার ফলে এটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে শাসিত হওয়ায় স্থানীয় কিছু আইনকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা ট্রাম্প প্রশাসনের রয়েছে।  

কিছুদিন আগে ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি দেন। 

বাউসার বলেন, “আমাদের আইনে খুব নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রয়েছে যা প্রেসিডেন্টকে আমাদের পুলিশ বিভাগের উপর আরো নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে। কিন্তু আমাদের শহরে বর্তমানে এই ধরনের কোনো পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই।”