চব্বিশের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ঘিরে তৈরি হওয়া মতপার্থক্য এখনো দূর হয়নি। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আদর্শিক দ্বন্দ্ব আরো গাঢ় হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে জোর চর্চা।
এ হাওয়া লেগেছে দেশের শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের মাঝেও। এ নিয়ে নিজের জোরোলো অবস্থান জানান দিলেন গণঅভ্যত্থানে অংশ নেওয়া অন্যতম অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।
রবিবার (১৭ আগস্ট) বাঁধন তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে এই অভিনেত্রী বলেন, “মানুষের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? শেখ হাসিনার মতো আচরণ করার চেষ্টা করবেন না। তার কী পরিণতি হয়েছে, তা আপনি দেখেছেন। তার পতনের পর ভেবেছিলাম মানুষ অন্তত একটা শিক্ষা নেবে। কিন্তু না, ঔদ্ধত্য এখনো থামেনি!”
১৫ আগস্ট উপলক্ষে শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকা শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এ নিয়েও চর্চা কম হয়নি। ইঙ্গিতপূর্ণভাবে এ বিষয়ে বাঁধন বলেন, “মানুষ কাকে সমর্থন করবে বা করবে না, সেটা ঠিক করার আপনি কে? এটা একান্তই তাদের নিজের ব্যাপার, মানুষকে বাধ্য করা আপনার কাজ না। মানুষের হৃদয় আছে, তারা যদি শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান জানাতে চায়, সেটা তাদের অধিকার, আপনি সেটা নির্ধারণ করার কেউ নন। শুধু আপনার মতের সঙ্গে মিলছে না বলে, মানুষকে খারাপ বানানোর চেষ্টা বন্ধ করুন।”
টাকার বিনিময়ে শোবিজ অঙ্গনের বেশ কজন তারকা শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এমন অভিযোগ এনে কে বা কারা ব্যাংক স্টেটমেন্টের একটি কপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে বাঁধন বলেন, “এই ব্যাপারটা নিয়ে হাসি পায়। আপনারা এতটাই সস্তা যে সেটা খুবই লজ্জাজনক। প্রথমে গুজব রটে, আমি জুলাই বিদ্রোহের সময় ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ২০০ কোটি টাকা নিয়েছি। এখন আবার নতুন গুজব উড়ছে, আমরা শেখ মুজিব সম্পর্কে পোস্ট দেওয়ার জন্য মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়েছি! ২০০ কোটি থেকে ২০ হাজার— এটা সত্যি? এই সামান্য টাকার জন্য কেউ কি এমন ঝুঁকি নেয়? এটি একেবারেই সার্কাস।”
খানিকটা পরামর্শ দিয়ে বাঁধন বলেন, “একটি বিষয় ভালো করে বুঝে নেন, এখন আর মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। না মিথ্যা দিয়ে, না সস্তা গুজব দিয়ে, না ফাঁকা হুমকি দিয়ে। সময় বদলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া আছে। বিশ্বায়ন হয়েছে। মানুষ এখন এসব নাটক খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারেন।”
মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুশীলন থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বাঁধন বলেন, “সত্যিকারের একজন নেতা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে না, তারা অনুপ্রাণিত করেন। সত্যিকারের একজন নেতা কারো কণ্ঠরোধ করেন না—তারা শোনেন। সত্যিকারের একজন নেতা ভিত্তিহীন অপবাদ ছড়ান না—তারা বিশ্বাস গড়ে তোলেন। তাই আপনারা সেই ক্ষমতার ভ্রান্ত ধারনা থেকে বেরিয়ে আসেন। আপনি মানুষকে পুতুলের মতো নাড়াবেন, এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসেন। সেই সুতা তো অনেক আগেই ছিঁড়ে গেছে। ইতিহাস যতটা জোরে চড় মেরেছে, তার চেয়ে আরো বেশি জোরে থাপ্পড় মারার আগেই জেগে উঠুন।”
“সত্যিকারের একজন নেতা হোন। সত্যিকারের মানুষ হোন। না হলে আপনি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আরেকটা ব্যর্থ কপি হিসেবেই ইতিহাসে থেকে যাবেন। বিশ্বাস করুন, আরেকটি ট্র্যাজেডি কেউ চায় না।” বলেন বাঁধন।