নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) একাডেমিক ভবন-৩ এর নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে অসমাপ্ত থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
শ্রেণিকক্ষ ও গবেষণাগার সংকটের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতেই শিক্ষা, গবেষণায় পিছয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
২০১৮ সালের এপ্রিলে নোবিপ্রবির ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন ৩ এর নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে জি কে শামীমের সুপারিশে কাজটি নেয় জি কে স্বপনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য শুরুতে ৩০ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু নিদিষ্ট সময় পার হলেও তিনতলা পর্যন্ত আংশিকভাবে কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পরবর্তীতে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করলে প্রকল্প থেকে জি কে স্বপনের প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে একাডেমিক ভবন ৩ এর নির্মাণকাজ আটকে যায়। পরবর্তীতে নোবিপ্রবি প্রশাসন আংশিকভাবে সংস্কার করে বিভিন্ন বিভাগকে ক্লাসরুম বরাদ্দ করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষককে একই রুমে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে, এমনকি অধ্যাপকদেরও নেই নিজস্ব কক্ষ। শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের অভাবে অনেক সময় ব্যবহারিক ক্লাস শেষ করছে শুধু তাত্ত্বিকেই। সেমিনার লাইব্রেরি ব্যবহারের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত তারা।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩টি বিভাগের মধ্যে মাত্র ১৫টি বিভাগ একাডেমিক ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেখানেও পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, শিক্ষকদের রুম ও কর্মচারীদের বসার জায়গার তীব্র সংকট রয়েছে।
অসম্পূর্ণ একাডেমিক ভবন-৩ এর কিছু কক্ষেই কয়েকটি বিভাগের কার্যক্রম চলছে। অবকাঠামোগত সংকটের কারণে প্রশাসনিক ভবনে চলছে চারটি বিভাগের ক্লাস। চারতলা বিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবনের মাত্র একটি তলা রিডিং রুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকি তলাগুলোতে আইসিটি সেল, সাইবার সেন্টারসহ পাঁচটি বিভাগের কার্যক্রম চলছে। অডিটোরিয়াম ভবনে চলছে আরো পাঁচটি বিভাগের ক্লাস, প্রাধ্যক্ষ ভবনে কোনো প্রাধ্যক্ষ না থাকলেও তিনটি বিভাগ ও কিছু অফিস চলছে সেখানে। এমনকি বিএনসিসি ভবন ও মেডিকেল সেন্টারের রুমও ক্লাসরুমে রূপান্তর করা হয়েছে।
আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুবদী ইসলাম বলেন, “আমাদেরকে একাডেমিক ভবন ৩ এর দ্বিতীয় তলায় তিনটি ক্লাসরুম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্ষায় ভবনের রুমে দেয়াল বেয়ে পানি পড়ে। জানালা না থাকায় ধুলা ও বাতাসে এলার্জি সমস্যা হয়। আর শব্দ দূষণের কারণে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করা যায় না। একাডেমিক ভবন-৩ না হওয়ার কারণে অন্য বিভাগগুলো যেমন কক্ষ পাচ্ছে না, আমরাও সঠিকভাবে ক্লাস করতে পারছি না।”
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ময়ূরী নূর বলেন, “৩৩টি বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। বেশিরভাগ বিভাগেরই ১-২টি কক্ষ বরাদ্দ। ফলে তীব্র ক্লাসরুম সংকট তৈরি হয়েছে। এতে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে এবং সেশনজটের আশঙ্কা বাড়ছে। বিগত ও বর্তমান প্রশাসন কেউই ভবনটির কাজ এগিয়ে নিতে পারেনি, জায়গাটি এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।”
শিক্ষকদের করুন অবস্থা তুলে ধরে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুদ কাইয়ুম বলেন, “এক রুমে ৪-৫ জন শিক্ষককে বসতে হচ্ছে। এমনকি অধ্যাপকরা নিজস্ব রুম না পেয়ে তিনজন পর্যন্ত এক রুমেই অফিস করছেন। অনেক বিভাগের চেয়ারম্যানের জন্য ও আলাদা রুম নেই। শুধু এই ভবনের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চেষ্টা করছে, আশা করা যায় শীগ্রই সমাধান হবে।”
সম্প্রতি নোবিপ্রবির অসম্পূর্ণ একাডেমিক ভবন ৩ এর অবশিষ্ট কাজ, নোবিপ্রবি স্কুল ও কলেজ ভবন তৈরি, বৈজ্ঞানিক গবেষণার যন্ত্রপাতি ক্রয়, দুইটি আবাসিক হল নির্মাণ প্রকল্প বাবত ৩৪২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একনেক সভায় পেশ করা হয়।
এ বাজেট পাস হলেই সমাধান মিলবে উল্লেখ করে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “আমরা উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট পেশ করেছি। কোনো উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা কমিটিতে পাস হলে তা প্রি-একনেক মিটিংয়ে যায়। সেখানে অনুমোদন পেলে একনেক কমিটিতে পাঠানো হয়। আমাদের কাছে প্রি-একনেক থেকে কিছু সংশোধনী চাওয়া হয়েছিল, আমরা সেগুলো পাঠিয়েছি। একনেক মিটিংয়ে পাস হয়ে গেলেই কাজ শুরু হবে।”