ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা ঋণের আবেদন করেছিলেন ইউনুস শেখ। ঋণ না পাওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তার মধ্যে। এ থেকেই পরিকল্পনা করেন ব্যাংক লুটের। সে অনুযায়ী শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ভোর ৬টার দিকে প্রহরী না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন তিনি।
কৃষি ব্যাংক খুলনার রূপসা ঘাট শাখার ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা লুট করেন এই ব্যক্তি। দেনার টাকা পরিশোধ করতে ইউনুসের এ পরিকল্পনা বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
সোমবার (১৮ আগস্ট) এমন বিবরণ জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ব্যাংক লুটের একমাত্র হোতা ইউনুস। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত রূপসার বিচারক অনন্যা রায়। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
গ্রেপ্তার ইউনুস রূপসা উপজেলার নিকলাপুর গ্রামের ইনছান শেখের ছেলে। তিনি কৃষি ব্যাংক ভবনের চতুর্থ তলায় ভাড়া থাকতেন। একই ভবনের নিচতলায় তার একটি ওয়ার্কশপ রয়েছে।
গত রবিবার মধ্যরাতে কৃষি ব্যাংক ভবনের চারতলা থেকে ইউনুসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক বিভিন্ন স্থান থেকে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯১০ টাকা উদ্ধার করে।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে রূপসা থানার ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, “দেনার দায়ে জর্জরিত ছিলেন ইউনুস শেখ। দেনা পরিশোধের জন্য কৃষি ব্যাংক পূর্ব রূপসা ঘাট শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে ১০ লাখ টাকা ঋণের আবেদন করেন তিনি। তবে, ঋণ পাওয়া হয়নি তার। পরবর্তীতে টাকা জোগাড় করার জন্য ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুযোগ খুঁজতে থাকেন তিন। সেই যুযোগ আসে শুক্রবার ভোরে।”
তিনি বলেন, “ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় নিচের ওয়ার্কশপে গিয়ে প্রথমে গ্রাইন্ডিং মেশিন এনে কলাপসিবলের তালা কেটে ফেলেন ইউনুস। এ কাজে তার দেড় মিনিটের মতো সময় লাগে। এরপর তিনি মূল প্রবেশদ্বার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ভল্ট ভেঙে ফেলেন। সেখান থেকে ২০ ও ৫০ টাকার নোট নিয়ে যান।”
ওসি বলেন, “টাকাগুলো নিয়ে তার তোশকের নিচে রাখেন। এরপর দুপুরে আবারও ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করেন। এবার ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট লুঙ্গিতে করে তৃতীয় তলার ফাঁকা একটি কক্ষে নিয়ে রেখে দেন। প্রথম পর্বে নেওয়া টাকাগুলো দিয়ে ইউনুস চালের দোকান, মুদি দোকান এবং বিভিন্ন সমিতির দেনা পরিশোধ করেন।”
ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, “শারীরিক অবয়ব কেউ যাতে কোনভাবে শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য ইউনুস হাতে মোজা এবং মুখে পলিথিন পরেন। সিসিটিভি ফুটেজে শারীরিক গঠন দেখে রবিবার মধ্যরাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ইউনুস টাকা লুটের কথা স্বীকার করেন। তিন বিভিন্ন সমিতি এবং দেনা হওয়া দোকানগুলোতে এই টাকা পরিশোধ করেছেন বলে স্বীকার করেন। দুইদিন ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে টাকাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৫২ হাজার ৯১০ টাকা।”
ইউনুস স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইলে তাকে দুপুর ১টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জবানবন্দি শেষ হলে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছে। সর্বশেষ এ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে সোমবার রাতে খুলনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হয়।