মানিকগঞ্জে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সবজি চাষে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মাঠের পর মাঠ সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। বিশেষ করে বেগুন, ধুন্দুল, চালকুমড়া, মরিচ, শসা, করলা, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষতি হয়েছে। অনেক জমিতে গাছ মরে যাওয়ায় পুরো ক্ষেত উজাড় হয়ে গেছে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলায় প্রায় ১৬ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ জমির ফসল অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হলে ধানসহ মৌসুমি ফসলের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। ফলে জেলার বাজারে সবজির দাম আরো বাড়বে এবং সাধারণ ভোক্তারা ভোগান্তিতে পড়বেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষিজমিতে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। যেসব জমি থেকে পানি নেমে গেছে, সেখানেও জমে থাকা অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক চাষি বাড়তি খরচ করে কীটনাশক ও সার ব্যবহার করলেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না।
সাটুরিয়া উপজেলার কৃষক আলী রহমত বলেন, “কখনো মাঝারি আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সহ্য করতে না পেরে অনেক গাছ মারা গেছে। যে কয়টা বেঁচে আছে, তাতেও ফুল-ফল ঠিকমতো আসছে না। আসলেও ঝরে পড়ছে।”
ঘিওর উপজেলার প্রান্তিক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, ধার-দেনা করে তিনি কয়েক বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছিলেন। ভালো ফলনের আশায় পরিচর্যা করলেও এখন কেবল ক্ষতির বোঝা বইতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “ঋণ করে চাষ করেছি। বৃষ্টি সব শেষ করে দিলো। এখন আর কিছুই করার নেই।”
সিংগাইর উপজেলার কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা চাই সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বিশেষ সহায়তা না দিলে আগামী মৌসুমে আর জমিতে নামতে পারব না।”
প্রান্তিক কৃষকেরা জানান, তাদের জন্য সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি। স্থানীয় বাজারে সবজির দাম বাড়লেও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সেই সুফল তারা পাচ্ছেন না। ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়েই তারা শঙ্কায় আছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, “বৃষ্টির কারণে মাটির অতিরিক্ত আর্দ্রতা সবজির গাছের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করা, ঢালু জমি ব্যবহার করা এবং মালচিং পদ্ধতি গ্রহণ করলে আংশিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।”